লুটেরা ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে সরকার: মান্না

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জনগণের কল্যাণের জন্য কোনো দাবি জানানো অর্থহীন। সরকার লুটেরা ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বোধগম্য কারণেই জ্বালানি তেলের দাম কিংবা বাসভাড়া কমানোর দাবি আমরা করছি না। দেশবাসীর কাছে আমরা বলতে চাই, এমন সরকার ক্ষমতায় থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাবে। এমন লুটেরা সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য শপথ ও চেষ্টা করাই হোক আমাদের যাবতীয় ক্ষোভের কার্যকর বহিঃপ্রকাশ।
এক লিখিত বক্তব্যে মান্না বলেন, করোনার ভয়ঙ্কর সংকটে দীর্ঘকাল কাটিয়েছে এ দেশের মানুষ। এই চরম সংকটে মানুষ সরকারকে তার পাশে পায়নি। করোনা সংকট শেষ হয়েছে তা বলা যায় না। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুটা সহনশীল পরিবেশ থাকায় চরম সংকটাপন্ন মানুষ তার নিজের মতো করে আবার বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু সে পথেও বিরাট বাধা তৈরি করলো সরকার- জ্বালানির দাম বাড়ানোর মাধ্যমে। হ্যাঁ, ‘এটা ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই সরকার’। তিনি বলেন, এ দেশের কিছু লুটেরা ব্যবসায়ী সরকারের যোগসাজশে জনগণের পকেট কেটেছে সবসময়। ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে মুহূর্তেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও নতুন মূল্যের পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করে বাজারজাত হতে দুই মাসের বেশি সময় লাগে। আবার সেই পণ্যের দাম যখন কমে যায়, তখন কমানো হয় না সেই দাম কিংবা খুব সামান্যই সমন্বয় করা হয়। এ দেশের সেসব লুটেরা ব্যবসায়ীদের মতো আচরণ করছে সরকার। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে মুহূর্তেই মূল্যবৃদ্ধি করছে, কিন্তু যখন মূল্য কম থাকে বছরের পর বছর তখন তার মূল্য কমায়নি। সুতরাং, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য বাড়ানো-কমানো কখনো ভাসমান ছিল না এই দেশে। তাহলে এখন কেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেওয়া হচ্ছে- প্রশ্ন রাখেন মান্না। মন্ত্রীদের সমালোচনা করে মান্না বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, এই কারণে ভারতে জ্বালানি তেল পাচার হবে এই অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। সরকারের মতে, সেখানকার দাম আমাদের চেয়ে বেশি, তাই এটা হবে। জ্বালানির মতো একটি তরল বস্তু একটি দেশে পাচার হতে পারে এমন উদ্ভট কথা মন্ত্রীরা বলছেন। তর্কের খাতিরে তাদের কথা সঠিক বলে যদি ধরেও নিই তবুও প্রশ্ন থাকছে— কেন আমরা জনগণের অর্থ খরচ করে একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি পুষছি? যানবাহনের নতুন ভাড়া নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব সময় যা হয়, হয়েছে সেটাই। যে পরিমাণ ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ভাড়া বেড়ে গেছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকা শহরের ভেতরে ও আন্তঃজেলা পরিবহনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধির হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। এই ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার জনগণের ওপরে প্রচণ্ড আর্থিক চাপ তৈরি করেছে। সরকার কিংবা মালিক সংগঠন কেউ তার কথা রাখেনি। এই সরকার ও সংগঠনগুলোর চরিত্র এবং অতীত কর্মকাণ্ড দেখে জনগণ অবশ্য জানে- তাদের কথা ভাবার কথা না। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারতের তুলনা দেওয়া হলেও দেখা যায়, ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেখানে পরিবহনের খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।
মান্না বলেন, টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও গত বৃহস্পতিবারের বাজার দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩০ শতাংশ, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩ শতাংশ, চিনি ১৬ শতাংশ, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ শতাংশ ও গুড়ো দুধ ১৩ শতাংশ বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত ব্যবস্থার জন্য শুল্ক কমানোর পরামর্শ এসেছিল, কিন্তু করা হয়নি। মজুতদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়নি। ‘সরকার ভর্তুকি দিয়ে সংকট সমাধান করতে পারতো’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি, গত সাত বছরে জ্বালানি তেলের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা আর করোনার সময়ে প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়ায় সরকার এই বাবদ ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। সরকার এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে নগদ টাকা দিতে পারতো ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অথবা বিপিসির করভার (প্রতি লিটার ডিজেলে কর ১৯ টাকা) কমিয়ে দিতে। অর্থাৎ যেকোনোভাবে ভর্তুকি দেওয়া জরুরি ছিল। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলাম, ডা. জাহেদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।