দেড় বিঘা জমির সবজি বিষে নষ্ট করলো দুর্বৃত্ত, হৃদরোগে আক্রান্ত কৃষক

0

স্টাফ রিপোর্টার চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় দুর্বৃত্তরা হতদরিদ্র এক কৃষকের দেড় বিঘা জমিতে চাষ করা সিম, বেগুন ও লাউ ঘাস মারা বিষ দিয়ে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরের জমি বর্গা নিয়ে ওই কৃষক নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। ধরন্ত ফসল শেষ হয়ে যাওয়া তার পথে বসার উপক্রম হয়েছেন তিনি। এ ঘটনার পর শোকে ও কষ্টে ওই কৃষক হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং তাকে সঙ্গে সঙ্গে চৌগাছা হাসপাতাল পরে যশোরে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে বর্গা চাষি জামাত আলী। প্রতি বছরের মত চলতি মৌসুমে তিনি নিজ গ্রামের মাঠে দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বেগুন, সিম ও লাউ চাষ করেন। ইতোমধ্যে ২০ কেজি সিম ও ১০টি লাউ তিনি বাজারে বিক্রি করতে পেরেছেন, আর প্রতিটি গাছের ডগায় ডগায় ধরেছে বেগুন। গত ১৪ নভেম্বর রাতে কে বা কারা কৃষক জামাত আলীর সমুদয় ফসলের ক্ষেতে ঘাস মারা কীটনাশক ছিটিয়ে সব ফসল ধ্বংস করেছে। ফসলের ক্ষেতে ঘাস মারা বিষ দেয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই সমুদয় ফসল বিবর্ণ হয়ে যেতে থাকে। একপর্যায় সব সবজি গাছ মরে যায়। তখন ওই কৃষক উপলব্ধি করেন তার ক্ষেত্রে ঘাস মরা বিষ দিয়ে সমস্ত ফসল মেরে ফেলা হয়েছে। কৃষক জামাত আলী জানান, অনেক কষ্টে মাঠে সবজির চাষ করেছেন। এখন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছিলাম কিšু— এক রাতেই সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে। কি ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবো তা জানি না। এর একটা সুষ্ঠ বিচার হওয়া দরকার। অন্যাথায় আমার মত অনেক গরীব মানুষকে তারা পথের ভিখারি করবে।
চাঁদপাড়া গ্রামের একাধিক কৃষক বলেন, কৃষক জামাত আলী অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। যখন তিনি বুঝতে পেরেছেন তার ফসল বিষ দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে চৌগাছা হাসপাতাল পরে যশোরে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ তাই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। হত দরিদ্র এই কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পুশিয়ে নেয়া সম্ভব না। চলতি মৌসুমে উপজেলার আরও দুই কৃষকের ফসল কেটে সাবাড় করেছে দুর্বৃত্তরা। একের পর এক ফসল নষ্ট হলেও কেউ আটক না হওয়ায় এই ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল। জানা যায়, গত সপ্তাহে উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নে এক কৃষকের ১ বিঘা জমির পেয়ারা গাছ কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে দুর্বৃত্তরা। প্রতিটি গাছে ফুল আর ফলে যখন ভরে উঠতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময়ে তার এই ক্ষতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। উপজেলার সাদিপুর গ্রামের মৃত বিলাত আলীর ছেলে কৃষক আরশাদ আলী (৬৫)। চলতি মৌসুমে গ্রামের মাঠে অন্যের নিকট থেকে প্রায় ১ বিঘা জমি ১২ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে সীম চাষ করেন। গত ৩ অক্টোবর রাতে কে বা কারা ওই কৃষকের সমুদয় সীম গাছ কেটে দিয়েছে। সকালে কৃষক ও কৃষাণী মাঠে এসে এই দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে যান মাঠে। সে ঘটনার আজও কোন কুল কিনারা হয়নি বলে জানান কৃষক আরশাদ আলী। প্রতি বছর উপজেলার কোন না গ্রামের মাঠে দুর্বৃত্তরা কৃষকের স্বপ্ন এ ভাবেই ধ্বংস করছে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ভুক্তভোগীসহ উপজেলার সচেতন মহল।