টাকার জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিকে সরকারি জমি দেখাতেন নাজিম!

0

মাগুরা সংবাদদাতা॥ কুড়িগ্রামের আলোচিত আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের সরকারি চাকরির বয়স খুব বেশিদিন নয়। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি যেখানে চাকরি করেছেন, সেখানেই বিতর্কিত কাজ করেছেন। আর শাস্তি হিসেবে তাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। চাকরি সূত্রে তিনি কিছুদিন মাগুরার মহম্মদপুরে এসি ল্যান্ড ছিলেন। ওই সময়ও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জমি বরাদ্দের নামে অর্থ দাবি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে টাকা, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিকে সরকারি জমি দেখিয়ে টাকা দাবি করতেন। এছাড়া টাকা না পেয়ে মিষ্টির দোকানের সব মিষ্টি ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন নাজিম।
মহম্মদপুরের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাজিম উদ্দিন ২০১৯ সালে কয়েক মাসের জন্য সেখানে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় তিনি ব্যাপক অনিয়ম শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাকে সরকারি জায়গা দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তার অনিয়মের প্রতিবাদে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নহাটা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। তারা সংবাদ সম্মেলন করে নাজিমের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিচার দাবি করেন। এছাড়া মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা বাজারের ব্যবসায়ীরা নাজিম উদ্দিনকে দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী এবং সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে তার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম লুলু বলেন, “নহাটা শত বছরের একটি পুরনো বাজার। এখানকার ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই নিজের জমিতে ব্যবসা করেন। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা থাকাকালে নাজিম উদ্দিন ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওই বাজারে পুলিশ নিয়ে গিয়ে কয়েকটি মিষ্টি ও চায়ের দোকানে গিয়ে ভাঙচুর করে। জসিম নামে এক ব্যবসায়ীকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ভূমি অফিস থেকে ডিসিআর নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া মিরাজ মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ীকে ‘তুই ঘর থেকে বের হ, এই ঘর আমার’ এমন কথা বলে অশালীন আচরণ করেন। সমীর কুমার ঘোষ নামে একজন মিষ্টি ব্যবসায়ীর ঘরে ঢুকে তার সব মিষ্টি নদীতে ফেলে দিয়ে ঘর ছাড়তে বলেন।” রাজাপুর বাজারের মিষ্টি বিক্রেতা অজয় ঘোষ বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমার কাছে টাকা দাবি করেছেন। না পেয়ে একদিন আমার দোকানের আসবাব এবং মিষ্টি ফেলে দেন।’ নহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ এই সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং ওইসব জমি ইজারার মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের চেষ্টা করতেন। এজন্য তিনি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।’ এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহম্মদপুর উপজেলা কার্যালয়ের তৎকালীন একজন কর্মচারী বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন অনিয়মে কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করতেন। কেউ রাজি না হলে তার প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করতেন।’