ঝিনাইদহে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ড। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোনটির লোকবল না থাকলেও পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কমিশনের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকায় স্থান পাওয়া আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার ঠিকানা দেখানো হয় ঝিনাইদহের বিষয়খালী ও খড়িখালী। কিন্তু সেখানে গিয়ে মেলেনি সংস্থার অস্তিত্ব। তবে এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়খালী বাজারের একটি আবাসিক ভবনে ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিল আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় যা ১৭ বছর বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিঞা খুরশিদ জানান, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি কালীগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। এরপর কি হয়েছে তিনি তা জানেন না। আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থা সাবেক পরিচালক ইমদাদুল হক পিন্টু এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া এলাকার অ্যাসোসিয়েশন ফর সোসিও ইকোনোমিক অ্যাডভান্সমেন্ট (এসিয়া) ও একই এলাকার হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় ঝুলছে সাইনবোর্ড। অপর পাশে বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ড। নিচতলার দুটি কক্ষকে প্রতিষ্ঠান প্রধান অফিস আছে বলে দাবি করলেও গত এক বছর ধরে তা ব্যবহৃত হচ্ছে বিউটি পার্লার হিসেবে।

নির্বাহী প্রধানের নিজ মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার অন্ধকার সিঁড়ি পেরিয়ে অপর একটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার অফিস হিসেবে। এই সংস্থারও নির্বাহী প্রধান ও সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজেই। কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাংবাদিক দেখে তিনি তড়িঘড়ি করে খুলে দেখান। তার পরিচালিত দুটি অফিসের একটিতেও কোন লোকবল নেই।

এনজিও দুটির নির্বাহী প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, কমিটিতে ২৮ জন সদস্য আছেন। তিনি ছাড়া কারো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা নেই। নির্বাচনের আগে কমিশন থেকে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাতেই চলবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে হেভেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাপড় ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

নাম সর্বস্ব লোকবলহীন প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষক তালিকায় স্থান পাওয়া নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, এদের দিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি এসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, এদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। তখন কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিসেবে প্রাথমিক নিবন্ধনযোগ্য ৭৩টি সংস্থার নাম, নির্বাহী প্রধান ও ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় ৩৬, ৪৭ ও ৬৪ নম্বরে রয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থা, অ্যাসোসিয়েশন ফর সোসিও ইকোনোমিক অ্যাডভান্সমেন্ট (এসিয়া) ও একই এলাকার হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। কিন্তু জেলা শহরে এই তিনটি সংস্থার কোন কর্মকান্ড নেই।