বাংলাদেশের ব্যাংক হিসাবে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে লিবিয়ায় অপহৃত দুই যুবকের মুক্তি

0

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা ॥ লিবিয়ায় অপহৃত ঝিনাইদহ ও যশোরের দুই যুবক ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তি পেয়েছে। সেখানে পাঁচদিন আটকে রেখে মাফিয়া চক্রটি দুই পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১২ লাখ টাকা। দেশের দুটি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ দেখানোর পর ফেরদৌস ও আলী হোসেন নামে দুই বাংলাদেশি যুবককে মুক্তি দেওয়া হয়।

অপহৃত দুই যুবকের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল লিবিয়ার মিসরাতা শহর থেকে যশোরের পলুয়া গ্রামের ফেরদৌস ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রিশখালী গ্রামের আলী হোসেনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসী চক্র। ওই গ্রুপে লিবিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি দুর্বৃত্তরাও অংশ নেয়।

অপহরণের পর ওই দুই যুবককে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে নেওয়া হয়। তাদের সাথে আরও ২০ জন বাংলাদেশি অপহৃত শ্রমিক ছিল। সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তাদের পরিবারের কাছে বার্তা পাঠায়।

হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার রিশখালী গ্রামের চাঁদ আলী জানান, লিবিয়া থেকে +২১৮৯২৭৬২১৪৮৬ নাম্বারের ইমো ব্যবহার করে তার অপহৃত ছেলে আলী হোসেনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায় টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে। অপহরণের দিনই লিবিয়া থেকে ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

চাঁদ আলী সন্তানের আকুতি দেখে জমি বিক্রি করে গত ২৪ এপ্রিল ইসলামী ব্যাংক ঝিনাইদহের ডাকবাংলা শাখা থেকে ৪ লাখ টাকা অপহারণকারীদের দেওয়া ২০৫০৭৭৭০২৮৬৫১৪৩১৭ নাম্বারের ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখার অ্যাকাউন্টে পাঠান।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অ্যাকাউন্টটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের। অ্যাকাউন্টটি মোছা রুকসানার নামে পরিচালিত হয়। লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের সাথে রুকসানার ভাই জড়িত বলে সন্দেহ করছে ভুক্তভোগীর পরিবার। তবে রুখসানার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, লিবিয়ায় তার ভাই থাকে। ভাইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করতেই লাইন কেটে দেন।

এদিকে যশোরের পলুয়া গ্রামের সালমা খাতুন নামে এক নারী গত ২৪ এপ্রিল ইসলামী এজেন্ট ব্যাংক ঝিকরগাছা উপজেলার ছুটিপুর বাজার শাখা থেকে ৪ লাখ টাকা অপহারণকারীদের দেওয়া ২০৫০২৬৩০১০০১৮২১১০ নাম্বারের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। হরিণাকুণ্ডুর রিশখালী গ্রামের আলী হোসেনের সাথে সালমা খাতুনের ছেলে ফেরদৌস অপহৃত হয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার ছুটিপুর বাজারের ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের শাখা থেকে নগদ অর্থ নড়াইলের রূপগঞ্জ বাজারস্থ ২০৫০২৬৩০১০০১৮২১১০ নাম্বারের ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়। এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করেন মরিয়ম ট্রেডার্সের মালিক জুল হুসাইন। যার লেদদেন আইডি ৫১২৫০৪২৪০০০১৯১৪৩।

ইসলামী ব্যাংক রূপগঞ্জ বাজার শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হুমায়ন কবীর বুধবার জানান, গত ২৪ এপ্রিল মরিয়ম ট্রেডার্সের মালিক জুল হুসাইনের অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬০০ টাকা পাঠানো হয়েছে। তবে কি উদ্দেশ্যে বা কারা পাঠিয়েছেন তা তিনি জানেন না।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, লিবিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় বাংলাদেশি দুর্বৃত্ত সেদেশের মাফিয়া চক্রের সহযোগিতায় শ্রমিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। লিবিয়ায় অপহরণ হলেও মুক্তিপণের বেশির ভাগ টাকা লেনদেন হচ্ছে বাংলাদেশে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশ তৎপর হলেই লিবিয়ায় অবস্থানরত এদেশীয় দুর্বৃত্তদের সহজেই শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, ভুক্তভোগী পারিবার যে সব অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে, ইচ্ছা করলে তাদের নামে আদালতে মামলা করতে পারেন। মামলা হলে তদন্ত করে এদেশীয় এজেন্টদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।