মুক্তেশ্বরী নদী ব্যক্তির নামে দলিল করে বিক্রির ঘটনায় তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসনের

0

তহীদ মনি ॥ মুক্তেশ্বরী নদীর জমি ব্যক্তির নামে দলিল হয়েছে এবং প্রায় দেড়শো মিটার নদী ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি হচ্ছে।

রোববার সকালে মাসিক রাজস্বসভায় এই তথ্য উপস্থাপন করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় তিনি সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি), পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

সভায় জানানো হয়, জিয়ার খালের প্রান্ত থেকে পার্শ্ববর্তী সেতু পর্যন্ত মাটি ভরাট করে সম্পূর্ণ নদী দখল করে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমদাদুল হকের কাছে খোঁজ নিতে গেলে তিনি জানান, সেখানকার স্থানীয়রা তাদের জানিয়েছেন যে মনা নামে এক ব্যক্তি এই জমি রেকর্ড করে নিয়েছে এবং জারিফা ইসলাম রোজ নামে এক মহিলা সাইনবোর্ড দিয়ে প্লট আকারে জমি বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত সাইনবোর্ডের ছবিও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাইনবোর্ডে ২৯টি প্লট বিক্রির একটি মানচিত্র দেওয়া আছে। ৫৮ নম্বর ভাতুড়িয়া মৌজার ২৮৩১ দাগের ওই ২৯টি প্লট বিক্রি হবে। সাইনবোর্ডে জারিফা ইসলামের নামের সাথে তিনটি মোবাইল নম্বরও লেখা রয়েছে।

এদিকে নদী দখল সংক্রান্ত এমন তথ্য উপস্থাপনের সময় আরও উঠে আসে, মুক্তেশ্বরী নদীর বহু অংশ প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ও সভার সভাপতি মো. আজহারুল ইসলাম সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) শেখ আব্দুল মোহায়মেনের পরামর্শ চাইলে তিনি আইনের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে এর উচ্ছেদের সহজ পথগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, হাইকোর্টের রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বলা হয়েছে। তাছাড়া এ জাতীয় ক্ষেত্রে ইজারা দেওয়া থাকলে বা দলিল হয়ে গেলেও আইনের ধারা বলে সবই বাতিল হতে পারে।

এছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি আইনের ধারা উল্লেখ করে জানান, ১৯৫৫ সালের নদী সংক্রান্ত আইনের ২৩(৪) ধারা বলে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা যেতে পারে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজেই সিএস খতিয়ান ও আরএস খতিয়ান দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

নদী রক্ষা কমিটির সভায় আরও জানানো হয়, গত জুলাই মাসে জেলার ২০টি নদীর মধ্যে ১৪টির ‘হেলথ কার্ড’ তৈরির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেই কাজটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সভাকে জানায়, ইতোমধ্যে শহরের ভৈরব নদ দূষণকারী ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

এদের মধ্যে সাতটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সময় জানানো হয়, ভৈরবের শহরাংশে নদে নৌকা চালানোর অনুমতি চেয়ে তিনজন আবেদন করেছেন। এর আগের সভায় এই নদে শহরবাসীর জন্য নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন। তবে সেই আবেদনের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো খোঁজ নেয়নি। এ কারণে জেলা প্রশাসক পাউবোর সমালোচনা করেন।

এ সময় শার্শার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেতনা ও হাকর নদীর দুরবস্থা তুলে ধরে দখলদার উচ্ছেদের অনুরোধ জানান।

সভায় জেলা প্রশাসক ও সভাপতি মো. আজহারুল ইসলাম মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরের কত গ্রাম, কত ইউনিয়ন ও কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত, কত পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে বা রাস্তায় বসবাস করছে, কতটি টয়লেট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, তাদের খাদ্য ও পানির সমস্যা কেমন এই সবসহ পানিবন্দী মানুষের অবস্থা জানতে চাইলেও সংশিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনওরা পুরোপুরি সঠিক চিত্র ও অবস্থা তুলে ধরতে পারেননি।

এ সময় সভাপতি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশিষ্টদেরকে ভর্ৎসনা করেন। তিনি বলেন, মণিরামপুর ও অভয়নগর এলাকায় সরকারি রাস্তাকে ঘেরের পাড় তৈরি করা হচ্ছে, যা বেআইনি। অথচ পাউবো বা উপজেলা কর্মকর্তারা সেগুলো উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন না এটা দুঃখজনক। তিনি সংশিষ্টদের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কমলেশ মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহসান হাবীবসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারগণ।