যশোরে বিএডিসির বীজের ‘কৃত্রিম’ সংকট, বেশি দামে বিক্রি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি আমন মৌসুমে যশোরের কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর ধানবীজ নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষকদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ডিলার ও বিএডিসির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদনও।

বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল এই চার জেলার জন্য মোট ৫৫৬ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল যশোরের জন্যই ৩০০ মেট্রিক টন বীজ রাখা হয়েছে। বিআর ১০, ১১, ২৩, ব্রিধান ৩০, ৭১, ৯০, বিনা ১৭, ২৬ সহ মোট ২৮টি জাতের এই ধানবীজ প্রতি ১০ কেজির বস্তা ৬৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, কোনো ডিলারই নির্ধারিত মূল্যে ধানবীজ বিক্রি করছেন না। নির্ধারিত দামে বীজ কিনতে চাইলে ডিলাররা বলছেন, বীজ নেই। অথচ বাড়তি দাম দিলেই তাৎক্ষণিকভাবে বীজ মিলছে। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বস্তা বীজ ডিলার পর্যায় থেকে ২৪০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ, ৬৭০ টাকার বীজ ৮৫০ থেকে ৯১০ টাকা দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

যশোর সরকারি সিটি কলেজ গেটের সিটি বীজ ভান্ডার ও কপোতাক্ষ বীজ ভান্ডারসহ কয়েকটি ডিলার পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্রের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিএডিসির বীজের মান ভালো হওয়ায় এবং প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় কৃষকরা এই বীজ সংগ্রহে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
ডিলাররা অধিক মূল্যে বীজ বিক্রির কারণ হিসেবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহের কমতির কথা বলছেন। বিএডিসির কর্মকর্তারাও ডিলারদের এই সুরে সুর মেলাচ্ছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ টনের কম বীজ উত্তোলন করলে ৯ শতাংশ এবং ২ টনের বেশি বীজ উত্তোলন করলে ১৩ শতাংশ হারে কমিশন পান ডিলাররা। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যের এই গরমিল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএডিসি যশোরের উপসহকারী পরিচালক (বীজ বিপণন) মুসা আহম্মেদ বলেন, ‘ডিলাররা আমাদের গোডাউন থেকে তাদের নামে বরাদ্দকৃত বীজ নিয়ে যায়। তবে সেটি তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। আমাদের গোডাউন থেকেও কৃষক পর্যায়ে সরাসরি বীজ বিক্রি করা হচ্ছে, তবে তা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে।’
তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিএডিসির ওই কর্মকর্তার বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিএডিসির গোডাউনে বীজের জন্য গেলে বীজ সংকটের কথা বলে তাদের ডিলারদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

চুড়ামনকাটির আমন চাষি হযরত আলী বলেন, ‘বিএডিসির নিবন্ধিত কোনো ডিলারের কাছে নির্ধারিত দামে ধানবীজ পাওয়া যাচ্ছে না। যে যার ইচ্ছামতো বিক্রি করছে।’ একই অভিযোগ করেছেন সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের কৃষক মো. বাবু। তিনি বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন ডিলারের কাছে গিয়ে ধান বীজের কথা বললেও তারা বলছেন, সরকারি বরাদ্দ বীজ শেষ হয়ে গেছে। এখন নিতে হলে বেশি দামে বাইরের বিভিন্ন কোম্পানির বীজ নিতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে যশোর সিটি কলেজ গেটের কপোতাক্ষ বীজ ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ রাকিব হোসেন বলেন, ‘আমন ধানের বীজ নিয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, এর জন্য সরাসরি দায়ী বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। তারা আমাদের চাহিদার ১০ শতাংশ বীজও দিতে পারেনি। যেখানে আমার ২০০ বস্তা বীজের চাহিদা রয়েছে, সেখানে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০ বস্তা বীজ। বিএডিসির অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কালোবাজারে এসব বীজ বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।”

তবে ডিলারদের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করেছেন বিএডিসি খুলনা বিভাগীয় বীজ বিপণন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক একেএম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, “বিএডিসির গোডাউনে পর্যাপ্ত ধানবীজ মজুদ রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ডিলার যদি বীজ নিতে চান, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কোনো প্রকার কালোবাজারে বিক্রির সুযোগ নেই।’