চৌগাছায় কাঁঠালের জমজমাট হাটে কাঙ্ক্ষিত দাম নেই

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় কাঁঠালের হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁঠাল নিয়ে হাটে উপস্থিত হচ্ছেন। তবে দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ সকলেই। চাষিরা বলছেন কাঁঠালের কাক্সিক্ষত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অপর দিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন বাগান মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে কাঁঠাল কিনতে হচ্ছে, সেই অনুযায়ী বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

চৌগাছায় দীর্ঘদিন ধরে কাঁঠালের চাষ হয়ে আসছে। আগে কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় কিংবা পতিত জমিতে বিচ্ছিন্ন ভাবে কাঁঠাল গাছ লাগাতেন। একসময় বাজারে কাঁঠালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও ভালো পেতে শুরু করেন কৃষক। এরপর হতেই অনেকে পরিকল্পিত ভাবে কাঁঠালের চাষ শুরু করেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছায় ১০ থেকে ১২ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হচ্ছে। অধিকাংশই চাষ হচ্ছে বাড়ির আঙিনা কিংবা পতিত জমিতে। মূলত দেশি নানা জাতের কাঁঠাল উৎপাদন করেন কৃষকরা। উপজেলার দু একটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা ছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কাঁঠালের গাছ দেখা মিলে।

কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল। এর পরিচিতি দেশে ও দেশের বাইরেও রয়েছে। কাঁঠাল যে শুধু পাকলেই খাওয়া যায় এমনটি না। কাঁঠাল ছোট থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত সব সময়ই তা খাওয়া যায় এমনটিই জানালেন এ অঞ্চলের চাষিরা। পাকা কাঁঠালের শাঁস ছোট বড় প্রত্যেকের কাছেই প্রিয়। কাঁঠালের বিচি আলুর মতই নানা তরকারীর সাথে তা রান্না করে খেতে বেজায় মজা। এছাড়া আটি ভাজি করেও খাওয়া যায়। একটি কাঁঠাল পাকার পর তার কোন কিছুই বাদ পড়েনা। যেমন পাকার পর কাঁঠালের শাস খাওয়া যায়, বিচি তরকারির সাথে রান্না হয়, কাঁঠালের বাকল গৃহপালিত পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে কারণে কাঁঠাল যখন পাকা শুরু করে তখন এর চাহিদা ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায় মনে করেন এ জনপদের চাষিরা।

শুক্রবার দুপুরে চৌগাছার প্রধান সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটে বেশ ভালই আমদানি হয়েে কাঁঠালের। চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল ভ্যান বা বিভিন্ন যানবাহনে এনে বিক্রির জন্য সড়কের পাশে, আবার কেউ ভ্যানে রেখেই বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন।

কথা হয় কাঁঠাল চাষি উপজেলার নারায়ণপুরের আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকাতে পতিত জমির সংখ্যা বেশি আর কাঁঠাল চাষও বেশি হয়। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কাঁঠালের চাহিদা থাকে বেশি সেই তুলনায় এ বছর মনে হচ্ছে চাহিদা কম। তারপরও বাজারে কাঁঠাল নিয়ে এসেছি ১০০ পিস কাঁঠাল ৮ হাজার টাকা বলছেন, দেখি আর একটু দাম পেলেই বিক্রি করবো।

উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৌসুমী ব্যবসায়ী শফিউদ্দিন, কান্দি গ্রামের তপন কুমার, মিরাজ হোসেন বলেন, প্রতি বছরই আমরা গ্রাম থেকে কাঁঠাল কিনে চৌগাছা হাটে বিক্রি করি। এ বছর হাট ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে। হাট যখন পুরোদমে জমে উঠবে তখন কাঁঠালের চাহিদা বেড়ে যাবে। আমরা গ্রাম থেকে বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে কাঁঠাল কিনছি, কিন্তু বাজারে সেই অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না।

এ বছর চৌগাছার বাজারে এক শ কাঁঠাল প্রকার ভেদে ৪ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলেন, দু একের মধ্যে বাগেরহাট জেলার কাঁঠাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, মোরলগঞ্জের রেজাউল ইসলাম, সাতক্ষীরার মোস্তাফিজুর রহমানসহ ঝালকাটি পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলা হতে ব্যপারিরা আসবে। তখন বাজারে কাঁঠালের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা ইতোমধ্যে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষ করে চলেছি। আশা করছি দ্রুতই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ব্যাপারির আগমন ঘটবে চৌগাছার বাজারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, কাঁঠাল মূলত বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে বেশি চাষ হয়। এছাড়া বেশ কিছু কৃষক পরিকল্পিত ভাবেও চাষ শুরু করেছেন। এ অঞ্চলে দেশি নানা জাতের কাঁঠালের চাষ হয়।