যশোরে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্টি

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম গত মে মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বুধবার কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি জানান, জেলায় তুলনামূলকভাবে হত্যা, মারামারি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েছে।

তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, যশোরে অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়া এবং অপরাধীদের ছাড়াতে তদবির করা লোক অনেক আছে।

জেলা প্রশাসক পুলিশসহ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে কেউ যেন অপরাধ করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি প্রয়োজনে সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধী এবং বিগত সরকারের সময়ে অত্যাচারকারীদের নাম ও কার্যকলাপ জেলা প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানান। তিনি আশ্বাস দেন, সেসব তথ্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেলে অবহিত করা হবে।

সভায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তারা দাবি করেন, এখনো থানায় কর্মরত বেশিরভাগ এসআই ও এএসআই বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তারা আওয়ামী লীগের পতনকে মেনে নিতে পারেননি। তাদের প্রশ্রয়ে ও সমর্থনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা ও আশ্রয় পাচ্ছে এবং তাদের সহায়তায় বিএনপি ও অন্যদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। এ

মনকি, পুলিশের সহায়তায় যাদের মারধর করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো মামলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বেশিরভাগ থানার ওসি, এমনকি সদর থানার ওসিও এসব পুলিশ সদস্যের কথামতো কাজ করছেন এবং বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতেও দ্বিধা করছেন না। বিএনপি জোর দিয়ে বলেছে, আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় জেলা পুলিশ প্রধান ও থানা প্রধানরা উপস্থিত থাকলে কোন পুলিশ কোন অপরাধ করছেন এবং কোন আওয়ামী সন্ত্রাসী ও দোসরকে কীভাবে সহায়তা করছেন, তা সরাসরি জানানো হবে।

সভার এক সদস্য বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, এই সভায় যারা বসে আছেন, তারা কেউই নিরাপদ নন; যে কেউ যে কোনো সময় আক্রমণের শিকার হতে পারেন।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। জেলায় খুন-ধর্ষণসহ যে সব অপরাধমূলক কাজ হয়েছে, তার সবগুলোই ‘ডিটেক্ট’ করা গেছে এবং আসামিও আটক আছে। এমনকি মঙ্গলবার দুপুরে যে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ৭ জন আসামিকে আটকসহ ৩২ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, ৫৫ লাখ টাকা ছিনতাই হওয়ার ঘটনা প্রচারিত হলেও প্রকৃতপক্ষে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সভায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতি জোর দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতায় মানহীন ও দক্ষ জনবলহীন নতুন নতুন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া, ফুটপাত দখলমুক্ত করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিডিএলজি ও পৌরপ্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম রসুল, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।