‘জয়ফুল জার্নি ফর দ্য পিপল’ অভিজাত আপ্যায়নে সন্তুষ্ট করল তিন শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরতলীর বিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন ষাটোর্ধ্ব আনোয়ার বেগম। এ থেকে প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়ে মাছ কিংবা মাংস দূরে থাক সামান্য ডাল ভাতও পেট ভরে খেতে পারেন না। সেই আনোয়ারা বেগমকে বৃহস্পতিবার দুপুরে নানান পদের বাহারি খাবার খাওয়ালো ‘জয়ফুল জার্নি ফর দ্য পিপল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ায় একটি অভিজাত রেঁস্তোরায় বিশেষ আপ্যায়নের আয়োজন করে সংগঠনটি। যেখানে শহরের তিন শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ একসাথে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। লালদীঘির পূর্ব পাড়ের ১০ জন ব্যবসায়ীর ‘জয়ফুল জার্নি ফর দ্য পিপল’ নামের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিশেষ মেহমানদারির খাবার তালিকায় ছিল অভিজাত সব খাবার।

আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিথিরা নির্ধারিত স্থানে হাজির হন। প্রথমে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বসানো হয় খাবার টেবিলে। এরপর মেহমানদের নানান পদের বাহারি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নিজ হাতে তাদের থালায় খাবার তুলে দেন। পরিবেশিত খাবারে ছিল পোলাও ভাত, ডাল, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস। সবশেষে মজাদার আইসক্রিম পরিবেশন করা হয় অতিথিদের।

আমন্ত্রণে আসা সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো রিকশাচালক মঙ্গল গাজী বলেন, ‘প্রতিদিন শহরে রিকশা চালাই। এই হোটিলেও আমার রিকশায় চড়ি অনেকে খাতি আসে। আজ দুপুর সময় এমনি যাতিলাম তাই এক ভাই রিকশা দাঁড় করায় হাতে একটা কার্ড দিয়ে কইলো আজকে এহেনে বসে খাওয়ার কথা। এরা পেট ভরি খাতি দেছে। ভাত, দুই পদের গোস্ত পেট ভরি খাইছি।’

শহরের বেজপাড়ার ছাঁয়া বিথির মোড়ের বাসিন্দা দৃষ্টি শক্তি হারানো গোলাম মোস্তফা শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ‘বিটারা আমার পেট ভরি খাওয়াইছে। মসজিদে মসজিদে সাহায্য আদায় করি খাই। ভালো খাবার খাওয়ায় সামর্থ আমার নেই। এরা আমারে যা খাওয়াইছে আমি খুব খুশি হইছি।’

হালিমা (৬৫) নামের এক ভিক্ষুক বলেন, ‘শহরের মানুষির কাছে চাইয়ে চিনতে খাই। অনেকে দুই এক পয়সা দেয় কেউ খাতি দেয় না। বড়লোকগের বাড়ির সামনে অনুষ্ঠান হলি যাই, তারা তাড়াই খাতি দেয় না। আজকি এমনি সাহায্য চাতিলাম, তখন এই বিটারা হাত ধরি নিয়ে আসি কইলো চাচি তুমি দুপুরি খাবা। খুব যত্ন করি পেট পুরি খাতি দেছে।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘জয়ফুল জার্নি ফর দ্য পিপল’ নামের সামাজিক সংগঠন পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য শহরের অভিাজত রেস্তোরাঁয় খাবারের আয়োজন করে। বিগত ঈদুল ফিতরেও তারা ঠিক এ রকম একটি আয়োজন করেছিল। আমরা সাধারণ বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। কিন্তু কোনো আনন্দই অর্থবহ হবে না, যদি সমাজের সকল শ্রেণির মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে। তারা সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সমাজের সকল স্তরের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে কিংবা ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য যে আয়োজন করেছে, আমি মনে করি তা থেকে সকলে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন আছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, দৈনিক লোকসমাজ-এর প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, ‘জয়ফুল জার্নি ফর দ্য পিপল-এর উপদেষ্টা এহতেশামুল হক পাপ্পু, সদস্য রিয়াদ উদ্দিন তুহিন, মিরাজুল ইসলাম মিন্টু, মনোয়ার হোসেন, কৃষ্ণপাল, সোহেল মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন, হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।

আয়োজক সংগঠনের সদস্য শাহরিয়ার রহমান হেলাল বলেন, আমরা চাই সমাজের সকল মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে যাক। সমাজে ধনী গরিবের কোনো বৈষম্য থাকবে না। সেই অভিপ্রায়ে আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নিয়ে ঈদুল আজহার বিশেষ আয়োজন করেছি। আমরা সাধ্যমতো তাদেরকে এক বেলা পেট ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের এই চেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।