জীবন রক্ষাকারী টিকা শূন্য যশোর

0

বি এম আসাদ ॥ পবিত্র ঈদুল আযহার আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এ উৎসবের মাঝে হতাশার খবর দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যশোরের হাসপাতালগুলোতে শিশুদের অপরিহার্য ইপিআই ভ্যাকসিন (টিকা) এবং কুকুর-বিড়ালের কামড়ের প্রতিষেধক এআরভি (র‌্যাবিস) ভ্যাকসিন নেই। টানা ১০ দিনের ছুটিতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে শিশু ও বয়স্কদের।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ইপিআই কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন শিশু আসে তাদের ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক নিতে। পোলিও, হাম-রুবেলা, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, মায়ালাইটিস, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, হিমোফাইলাইটিস, নিউমোনিয়া-এমন সব জীবন রক্ষাকারী টিকা দিতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। নিজেদের সন্তানকে সুস্থ রাখতে যারা নিয়মিত টিকা কেন্দ্রে আসেন, তারা এখন খালি হাতে ফিরছেন।

অন্যদিকে, প্রাণী কামড়ানোর শিকার হয়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জন মানুষ এআরভি ভ্যাকসিন নিতে আসেন। এ টিকার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারিভাবে এই ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় আক্রান্তরা অসহায়ভাবে ফিরছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ইপিআই টিকা কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. নুরুদ্দিন নুরু স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। সরকারি সরবরাহ একেবারেই বন্ধ।’ নুরুদ্দিন নুরু আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পবিত্র ঈদুল আযহার দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি থাকায় আগামী ২০ জুন পর্যন্ত টিকা ও ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে ছুটির কারণে মালামাল সরবরাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বারবার চিঠি পাঠিয়েছেন। অবশ্য তাতে কোনো লাভ হয়নি। তাকে জানানো হয়েছে, ‘এআরভি ভ্যাকসিন নেই।’

তিনি জানান, বিগত সরকারের আমলে একভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হতো, কিন্তু এখন নতুন পদ্ধতিতে বাজেট অনুমোদন হওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, যা সময়সাপেক্ষ।

সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, এআরভি ভ্যাকসিনের সংকট দীর্ঘদিনের। এছাড়াও, উপজেলা পর্যায়ে পেনিসিলিন টিকারও ঘাটতি রয়েছে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ঈদুল আযহার দীর্ঘ ছুটি এবং একই সাথে ভ্যাকসিন ও টিকার সংকটের কারণে যশোরবাসী চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। নবজাতক ও শিশুরা টিকা না পেয়ে দুর্ভোগের শিকার হবেন। প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে জরুরি প্রয়োজনে ভ্যাকসিন বাজার থেকে চড়া মূল্যে কিনে নিতে হবে, কারণ দীর্ঘ ছুটির সময়কালে সরকারিভাবে কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’