অনিয়মের কারণে বাতিল কেন্দ্র বহালের দাবিতে যশোর বোর্ডে বিক্ষোভ পরীক্ষার্থীদের

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সাতক্ষীরার শালিখা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার যশোর শিক্ষাবোর্ডে বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবি, নতুন নির্ধারিত কেন্দ্র কলেজ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানকার যাতায়ত ব্যবস্থাও দুর্গম। দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভের পর বোর্ড কর্তৃপক্ষের যাতায়াত ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা । যশোর বোর্ডে এবার ২৪০টি কেন্দ্রে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার উপযোগী পরিবেশ না থাকায় শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি ৪৫টি ভেন্যু কেন্দ্র (পরীক্ষা কেন্দ্রে আসনের চেয়ে বেশিসংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য পাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেন্যু কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা) বাতিল করে। বিক্ষুব্ধ শালিখা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা ভেন্যু কেন্দ্র রাড়ুলি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল।

বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ জানিয়েছেন, অতীতে রাড়ুলি ভেন্যুতে এতটাই অনিয়ম হয়েছে যে তা সকল শালীনতা ও পরীক্ষার নিয়মনীতি ধ্বংস করেছে। যার কারনে অন্য ৪৪টি ভেন্যুর সাথে এটিও বাতিল হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন নির্ধারিত কপিলমুণি কেন্দ্র তাদের কলেজ থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নতুন কেন্দ্রে বিকল্প পথে যেতে কপোতাক্ষ নদী পার হতে হয়, যেখানে ভালো নৌকার ব্যবস্থা নেই এবং বর্ষাকালে কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। এই দূরত্ব ও ভোগান্তির বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছিল। গতকাল ছিল সেই আবেদনের শুনানির ধার্য দিন।

এদিন শিক্ষার্থীরা বোর্ডে জড়ো হয়। দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বোর্ডে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মো: আব্দুল মতিন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন যে, কলেজ ক্যাম্পাস থেকে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হবে। এই আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা তাদের ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এবং সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য এ বছর বোর্ডের ৪৫টি ভেন্যু বাতিল করা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে, তারা মূলত রাড়ুলি ভেন্যুর শিক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনই ওই ভেন্যুর কেন্দ্রসচিবসহ দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে পরীক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনা ও নকলের অভিযোগ রয়েছে।

অধ্যাপক আব্দুল মতিন আরও বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কলেজ প্রধান ও কয়েকজনের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তারা বোর্ড ঘোষিত কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেন।

বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে বোর্ডে পাঠিয়েছে। তার মতে, অতীতে রাড়ুলি ভেন্যুতে এতটাই অনিয়ম হয়েছে যে তা সকল শালীনতা ও পরীক্ষার নিয়মনীতি ধ্বংস করেছে। যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তারাই এদেরকে আজ বোর্ডে পাঠিয়েছে । তিনি আরও জানান, ভেন্যু বাতিল করার পর কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোর্ডকে অসহযোগিতার কথাও বলা হয়েছিল। তবে বোর্ড সব সময়ই নকলমুক্ত এবং মূল পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।

বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, কপিলমুণিতে নির্ধারিত কেন্দ্র খুব বেশি দূরে নয়। ওই সূত্র আরও দাবি করে যে, ভেন্যু বাতিল করার সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ভেন্যু চলে গেলে সেখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে না। তাদের অভিযোগ, সেখানে পাসের নিশ্চয়তা দিয়ে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ফলে কলেজ প্রশাসনই বর্তমানে বোর্ডকে অসহযোগিতা করছে।