‘এটা শেষ আন্দোলন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না’

আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় সমাবেশ যশোরে

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। আগামী ২২ জুনের মহাসমাবেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সক্রিয়ভাবে যোগদান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি এটিকে ‘জীবনের শেষ দাবি আদায়ের আন্দোলন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে জারিকৃত টাইমস্কেল সংক্রান্ত অবৈধ চিঠি বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে আগামী ২২ জুন থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান গ্রহণ করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের কেউ ঘরে ফিরে যাব না।’ তিনি সকল শিক্ষককে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকার সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

শনিবার দুপুরে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এই আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ আলী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যশোরের সমন্বয়ক বিএম কিয়াম উদ্দীন। এছাড়াও খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে আগত নেতারাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক শাজাহান কবির।

‘চলো চলো ঢাকা চলো, মহাসমাবেশ সফল করো’ স্লোগানে বিডি হলে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে জানানো হয়, শিক্ষকরা ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে জাতীয়করণকৃত শিক্ষক হিসেবে বেতন পাচ্ছিলেন এবং অনেকেই টাইমস্কেলও পেয়েছিলেন। অনেকে অবসরেও চলে গেছেন।

কিন্তু গত ২০২০ সালের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় টাইমস্কেল বাতিল করে এবং ইতোমধ্যে টাইমস্কেল গ্রহণকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি ইস্যু করে। এই ‘অবৈধ’ আদেশ বাতিলের দাবিতে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই আদেশের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এবং ১৭ মার্চ জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

সর্বশেষ আগামী ২২ জুন তারা মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন। সেদিন থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন। জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিগত সরকারের আমলে সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন ছাড়াও তাদের দাবি, কার্যকর চাকরির ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ জ্যেষ্ঠতা প্রদান ও বাদপড়া প্রধান শিক্ষক-শিক্ষকদের গেজেটভুক্ত করা।

প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য বক্তারা তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তারা জানান, ২৪ বছর আন্দোলন শেষে তারা জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হয়েছিলেন। ৮, ১২ ও ১৫ বছর চাকরিকালের হিসেবে তাদেরকে টাইমস্কেল দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক টাইমস্কেলসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ‘অবৈধ’ ওই চিঠিতে সব আর্থিক সুবিধা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রেক্ষিতে অনেক শিক্ষক শূন্য হাতে অবসরে গিয়েছেন, কেউ কেউ সামান্য অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

বর্তমানে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এবং যারা চাকরিতে রয়েছেন তাদেরও ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাই এই ‘কালো আদেশ’ বাতিল করা জরুরি বলে তারা জানান।