যশোরে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ভুয়া অনলাইন পোর্টাল শনাক্ত ও জনস্বাস্থ্য সংকটে গুরুত্ব

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যশোর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা গতকাল রবিবার সকালে জেলা কালেক্টরেট ভবনের অমিত্রাক্ষর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। কোরবানির পশুর পর্যাপ্ত সরবরাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরি বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য সমস্যা ও ভুয়া অনলাইন পোর্টালের অপতৎপরতাসহ জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি গুজব ছড়ানো অনলাইন পোর্টাল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় নামসর্বস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও মিথ্যা রিপোর্টের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আনেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নামে বেনামে নিউজ পোর্টালগুলো ইচ্ছামতো সংবাদ পরিবেশন করছে। তাদের অধিকাংশ নিউজ ভুয়া।

এ সময় পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, বেনাপোল কেন্দ্রিক এসব ভুয়া সাইটের ছড়াছড়ি বেশি। এ বিষয়ে জেলার তথ্য অফিস থেকে সভায় জানানো হয়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভুয়া সাইটের সংখ্যা বাড়ছে। তারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন এবং এই সব সাইটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি করে গুজব ছড়ানো অনলাইন পোর্টাল শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সভায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে জেলায় এবার ৯৫ হাজার ৮১২টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত জেলায় পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৪টি। সে হিসেবে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে কোনো সমস্যা হবে না, বরং প্রায় ১৮ হাজার ৭৬২টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে, যা অন্য জেলার হাটে পাঠানো যাবে। জেলার স্বীকৃত ১৮টি পশুর হাটের জন্য ১৯টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, ফলে নির্বিঘ্নে পশু কোরবানি সম্পন্ন করা যাবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়, বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুলে চুরির ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কোনো কোনো স্কুলে চারবার এবং একাধিক স্কুলে তিনবারও চুরি হয়েছে। চুরি বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা সভায় জানান, উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্ত করার পর্যাপ্ত কিটস নেই। এখন ডেঙ্গুর চাপ স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। এছাড়া পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা টিসিবির পণ্য বিতরণ ও টোল আদায়ে ব্যস্ত থাকায় তারা নিজেদের ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) এর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, শার্শা উপজেলা হাসপাতালের ছাদের উপরে মাদকের আখড়া বসেছে।

এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গুরুত্বসহকারে দেখার অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের ভিতরে ধূমপান বিক্রির দোকান না বসানোর দাবি করেন তিনি। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য হাসপাতাল প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এছাড়া চুড়ামনকাটি এলাকায় গড়ে উঠা কবির মিলিটারি’র ননী ফল নার্সারির বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ননী ফল যৌন উত্তেজক ভেষজ। ননী ফল নার্সারির মালিক এলাকায় প্রভাবশালী এবং তার গুণ্ডাবাহিনীও রয়েছে। তার এই নার্সারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। বর্তমানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে, ফলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৮০টির মতো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স অবস্থান নেয়। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সেখান থেকে সরে না এবং তাদের বেপরোয়া আচরণে প্রায়শই সমস্যা সৃষ্টি হয়।

জেলা প্রশাসক ও সভার সভাপতি জানান, কেশবপুর হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। অ্যাম্বুলেন্স মানুষের লাইফলাইন উলে¬খ করে তিনি বলেন, মাস্টার রোলে হলেও কেশবপুরে একজন চালক নিয়োগ করতে হবে, যেন জরুরি সময়ে মানুষ সেবা পেতে পারে।

সভায় জেলা প্রশাসক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং গভীর নলকূপ স্থাপন কাজের ধীরগতির জন্য তিরস্কার করেন। মানুষের সেবায় প্রকৃতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। ঠিকাদারের তালবাহানায় কাজ পিছিয়ে যেতে পারে না উলে¬খ করে তিনি মানুষকে হয়রানি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান। হাসপাতালে পানির সংকট সমস্যা এখনও সমাধান না হওয়ায় জেলা প্রশাসক জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজটি করতে না পারলে এলজিইডি তার কাজ করবে।

তিনি একইভাবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিসিক ও ওষুধ প্রশাসনের কাজ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, বাজারে মসলা ও লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র ওষুধের দোকান খোলা হচ্ছে। ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও ড্রাগ লাইসেন্স না থাকা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন তিনি।

অনুষ্ঠিত সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদের অর্থায়নে পালবাড়ি এলাকায় একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে। চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে আগামী বছর জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু হবে।

তাছাড়া পৌরসভার পক্ষে জানানো হয়, আসন্ন ঈদ উল আযহা সামনে রেখে যশোর পৌরসভার ভিতরে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন এখনও চাওয়া হয়নি।

সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, তুলা উন্নয়ন বোর্ডসহ বেশ কিছু দপ্তরকে তাদের কাজ যথাযথভাবে পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রধান ডা. মো. রাশেদুল হক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল হক, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।