চৌগাছার আইনাল হোসেনের পরিবারে মৌমাছির বন্ধুত্ব!

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার আইনাল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সাথে যেন গভীর বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে মৌমাছির। শীত মৌসুম এলেই গুনগুন শব্দ করে ঝঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে বাড়ির জানালা, দরজা, ছাদের কার্নিসসহ বিভিন্ন স্থানে চাক বাঁধে। প্রায় ছয় মাস অবস্থান করে গরম এলেই আবার চলে যায়। এই সময়ে মধু বিক্রি করে বাড়ির মালিক বাড়তি আয়ও করেন। বর্তমানে ওই বাড়ির মালিকের ঘরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৬টি মৌমাছির চাক রয়েছে।
উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের একেবারেই ভারত সীমান্তের তারকাঁটা ঘেঁষা গ্রাম গয়ড়া। এখানকার অধিকাংশ বাড়ি রাতে ভারতের সার্চলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। গয়ড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আক্কাচ মোড়লের ছেলে আইনাল হোসেন একজন ব্যবসায়ী। তার বাড়ি এখন শুধু চৌগাছা নয়, দূর-দূরান্তের মানুষও মৌমাছির বাড়ি হিসেবে চেনে। একতলা বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১৬টি মৌমাছি চাক বেঁধেছে।
সম্প্রতি গয়ড়া গ্রামের আইনাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৌমাছি আর বাড়ির মানুষের সাথে যেন তৈরি হয়েছে মিতালী। বাড়ির মানুষেরা ঘরের দরজা খুললে কিংবা বাড়িতে প্রবেশ করলে মৌমাছিগুলো নীরবতা পালন করে। অথচ নতুন কোনো মানুষ গেলে তারা চাকের পরেই ডানার শব্দ করে জানান দেয় তুমিই এই বাড়ির নতুন সদস্য। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এক দিন দুদিন কিংবা এক-দুই মাস না বছরের পর বছর ধরে শীত এলেই মৌমাছি ওই বাড়িতে চাক বাঁধে তবে কাউকে কখনও আক্রমণ করে না।
বাড়ির মালিক আইনাল হোসেন বলেন, কবে থেকে মৌমাছি আমার বাড়িতে চাক বেঁধে থাকে তা সঠিক মনে নেই। তবে শীত মৌসুম এলেই এরা চলে আসে আর গরম পড়লে আবার চলে যায়। যখন মৌমাছির ঝাঁক বাড়িতে প্রবেশ করে তার আগে খোলা আকাশে কিছু সময় উড়তে থাকে। তখন বাড়ির আঙিনার ওপর আকাশ যেন কালো মেঘের মত ঢেকে যায়। এরপর তারা একে একে কয়েকটি চাকে বিভক্ত হয়ে বসে যায়। দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ মাস আমার বাড়ি থাকে, এই সময়ে আমরা চাক ভাঙি এবং টাটকা মধু পাই। এক কেজি মধু ৮শ হতে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাকের প্রকার ভেদে ৩ থেকে ৫ কেজি মধু হয়। মৌমাছি যতদিন আমার বাড়িতে থাকে ওই সময়ে কিছু বাড়তি আয়ও হয়। মাছির গায়ে আঘাত না করলে তারা কখনও আক্রমণ করে না। ঘরের জানালা, দরজা, ছাদের কার্নিস সব জায়গাতে তারা চাক বাঁধে। তারা যখন থেকে বাড়িতে আসা শুরু করেছে তখন থেকে বাড়ির সকল সদস্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলাফেরা করে। তবে বর্তমানে আমার মনে হয় মৌমাছির সাথে গোটা পরিবারের এক ধরনের মিতালী তৈরি হয়েছে। তারা আমাদের দেখলে একটু গুনগুন শব্দও করে না। রাতের আধার কেটে যখনই সূর্যের দেখা মেলে তখন থেকে ওরা মধু সংগ্রহে বের হয়ে যায়।
গ্রামের বাসিন্দা পলাশ হোসেন, ইয়াসিন আলী, আকরাম হোসেন বলেন, হাজী সাহেবের বাড়িটি এখন অনেকেই মৌমাছির বাড়ি হিসেবে চিনে। বছরের পর বছর ধরে ওই বাড়িতে মাছি চাক বাঁধে তবে তারা কাউকে আক্রমণ করেছে এমন নজির নেই।