‘সংঘাতময় বিশ্বে গৌণ’ প্রকৃতিকে প্রতিপাদ্য করে যশোরে এবারের বর্ষবরণ শোভাযাত্রা

0

শিকদার খালিদ ।। আজ বিদায় নিচ্ছে ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। আগামীকাল যে নতুন সূর্য উঠবে তা নতুন বছরের। নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ সাড়ম্বরে উদযাপন করেন দেশের মানুষ। যশোরে বর্ষবরণ আয়োজনের ঐতিহ্য রয়েছে। বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ শোভাযাত্রার সূতিকাগার যশোর। দেশ জুড়ে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে যে শোভাযাত্রা তার শুরুটা যশোরের চারুপীঠ থেকে।

এবছর নতুন ভাবনায় নতুন আঙ্গিকে বাংলা বর্ষবরণ শোভাযাত্রার আয়োজন হচ্ছে যশোরে। বর্ণাঢ্য রূপ দিতে থাকছে নতুন সংযোজনও। একথা জানালেন বাংলা বর্ষবরণ শোভাযাত্রার প্রথম উদ্যোক্তা ও চারুপীঠ যশোরের পরিচালক মাহবুব জামাল শামীম। তিনি নিজে এ পরিকল্পনা করেছেন।

এছাড়াও বর্ষবরণের অন্যান্য আয়োজনতো থাকছেই সংস্কৃতির ঐতিহাসিক পীঠস্থান যশোরে। সেই আয়োজনের শেষ প্রস্তুতি চলছে আজ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে।

মাহবুব জামাল শামীম লোকসমাজকে বলেন, এবার আমরা প্রকৃতি পরিবেশ বিষয় করলাম। ‘যতনে রাখি এ ধরিত্রীরে’ এটা আমাদের কনসেপ্ট করছি। বিষয়টা পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হানাহানি, মারামারি, স্বৈরাচার এসব চলছে তো- তাই সমস্ত বিষয়টা গৌন মনে হচ্ছে। কিন্তু এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্ত পৃথিবীর মানুষ মিলে পৃথিবীকে সুস্থ করা, বাস যোগ্য রাখাটা, মানে প্রাণ টিকে থাকে সে রকম পৃথিবী তৈরি করার জন্য সমস্ত পৃথিবীর মানুষ মিলে করার কথা ছিল। তা আমরা করছি না। যুদ্ধে নামছে সারা পৃথিবী। সেইখান থেকে আমরা প্রকৃতি পরিবেশ নিয়ে শোভাযাত্রার বিষয় করেছি।

তিনি বলেন, অন্য বছরগুলোতে শোভাযাত্রায় নানান রকম জীব-জানোয়ার, পুতুল-টুতুল সব বানাই। এবার হবে প্রাকৃতিক। যেমন- গাছই প্রকৃতির প্রধান। শোভাযাত্রায় বন বানাবো আমরা। অনেকগুলো শিশু গাছ হয়ে যাবে। তাদের কোলে থাকবে পাখি। মুকুটটা করা হচ্ছে বট পাতার। শোভাযাত্রার মধ্যে বাঘ আর হরিণ ধরাধরির মতো খেলবে। হাতি, বানর সব থাকবে। পাহাড় আর নদী থাকবে। নদীর মুখে দুইটা কুমির দিয়ে থাকবে। নদীর ভিতরে মাছ আর অনেক অনেক জলজ প্রাণী আঁকা আছে। এটা প্রদর্শন করবে একটি নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভারি সুন্দর পোশাকে জেলে, মাঝি, গায়ের বধূ, নদী কেন্দ্রীক যা থাকবে তাও প্রদর্র্শন হবে। পাহাড়ের মধ্যে থাকবে মেঘ, সূর্য, চাঁদ- সব মিলিয়ে এও একটা বড় ডিসপ্লে। এরপরে মুখোশ, মাছ রাঙা পাখি থাকবে। আমাদের অনেক সংগঠন শোভাযাত্রায় অংশ নেবে।

চারুপীঠ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম আরও জানান, শোভাযাত্রার ইতিহাসে একটা নতুন সংযোজন হচ্ছে যে এবার চলমান মঞ্চ। শোভাযাত্রায় চলতে চলতে নাটক করা হবে। আমাদের থিয়েটার দলগুলো ছোট বিষয় নিয়ে সে জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এছাড়া সব সংগঠনগুলো তৈরি হচ্ছে। সেখানে নানান দৃশ্যমান তৈরির কাজ চলছে। সবাই মিলে একটা বড় শোভাযাত্রা করতে যাচ্ছি এবার।

গত ৪৮ বছর ধরে উদীচী যশোর শহরের পৌর উদ্যানে সকাল ৬টা থেকে আয়োজন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। প্রায় দশটি সংগঠন যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে নতুন বছরের প্রথম দিনে পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানায় নেচে-গেয়ে।

পুরনো সব জ¦রা আর ভুলগুলোকে পিছনে ফেলে নতুন দিনকে আহ্বান জানাবেন ১৪৩২-এর প্রথম সকালে যশোরের মানুষ। সেই উৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন তাদের। এখন শুধু অপেক্ষা রাত পোহানোর। নতুন আঙ্গিকে নতুন রাজনৈতিক আবহে এবছর বর্ষবরণ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। সেখানে এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে নববর্ষের ঐকতান ফ্যাসিবাদের অবসান।