দেলোয়ার ভাই : অন্তরালের কিছু টুকরো সত্য

0

মারুফ কামাল খান

[▪️১৬ মার্চ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতিতর্পণ]

অনেক সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাক আসে লিটমাস টেস্ট হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামের যে বিপর্যয় নেমেছিল সেই সময়ে উজ্জল হয়ে ওঠা অল্প কয়েকটি নামের একটি হচ্ছে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এক-এগারোর অগ্নিপরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন নীল থেকে টকটকে উজ্জ্বল রক্তবর্ণ ধারণ করে।

১৯৫২-এর সেই ভাষা আন্দোলনে শামিল হবার মধ্য দিয়ে তার হাতেখড়ি হয় রাজনীতিতে। ৭৮ বছর বয়সে জগৎ-সংসারের সফর সেরে পরলোক যাত্রা অর্থাৎ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত তিনি ছিলেন আগাগোড়া রাজনীতিবিদ। ৭৮ বছরের আয়ুকে বাংলাদেশের হিসেবে স্বল্পায়ু বলা যায় না। কিন্তু এমন এক চরম ক্রান্তিকালে তিনি চলে গেছেন, যখন রাজনীতি, আদর্শ ও দেশের জন্য তাকে আরো কিছুদিন খুব প্রয়োজন ছিল।

একটা লম্বা সময় ধরে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে ‘সাংবাদিক’ বলে সম্বোধন করতেন। আমি ডাকতাম তাকে দেলোয়ার ভাই বলে। তিনি আন্দোলনে এবং সরকারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্ত কেন জানি এই দলে শীর্ষ পর্যায়ের যে ‘এলিট ক্লাব’ তাতে দেলোয়ার ভাইয়ের প্রবেশাধিকার ছিল না। অন্তত এক-এগারোর আগ পর্যন্ত এটাই ছিল চরম সত্য।

তিনি নিজেও তার এই অবমূল্যায়নের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সময় এক ঘরোয়া আলাপচারিতায় তাকে বলতে শুনেছি, ‘আমার ভূমিকা হচ্ছে ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলার মতো।’ আবার ১৯৯১ সালে তিনি যখন চিফ হুইপ তখন জাতীয় সংসদ ভবনে তার অফিসে বসে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি হলাম সংসদের রাখাল।’

ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন এবং শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতাকে জীবনে প্রথম পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। পরে রাজনীতির টানে শিক্ষকতা ছেড়ে আইনজীবী হন তিনি। গোড়াতে ছিলেন বামপন্থী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী। পরে মস্কো-পিকিং বিভাজনে তিনি মস্কোপন্থী ন্যাপে নিজেকে যুক্ত করেন। পাকিস্তান আমলে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে মানিকগঞ্জে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি পালন করেন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন তিনি। মানিকগঞ্জে তার নেতৃত্বেই বিএনপি গঠিত হয়। বিএনপির মনোনয়নে তিনি তার এলাকা থেকে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরশাদের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলনে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সামনের কাতারে থেকে ভূমিকা পালন করেন। তিন জোটের লিয়াজোঁ কমিটিতে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রতিনিধি। ১৯৮৫ সালে খন্দকার দেলোয়ার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।

এক-এগারোর জরুরি সরকারের আমলে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার নেতৃত্বে দলের এক বড় অংশ ‘সংস্কার’ নাম দিয়ে এই উদ্যোগে শামিল হয়। ম্যাডাম জিয়া তখন মহাসচিব হিসেবে মান্নান ভুঁইয়ার বিকল্পের সন্ধান করছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্ তখন সংস্কারপন্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন খুব স্ট্রং-হেডেড মানুষ। ওই ক্রুশিয়াল সময়ে মহাসচিব হিসেবে আরেকটু ঠাণ্ডামাথার নেতা দরকার। নজরুল ইসলাম খানও ছিলেন ম্যাডাম জিয়ার পছন্দের তালিকায়। তবে তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। এছাড়া জরুরি অবস্থার মধ্যেই বিএনপির সন্মেলন করে কতিপয় জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলে সংবাদপত্রে তার একটি মন্তব্য সংশয় সৃষ্টি করে।

আমরা সে সময়ে লালমাটিয়া পানির ট্যাংকের কাছে ‘ইয়াসিন ভাইয়ের অফিসে’ নিয়মিত আড্ডা দিতাম। সে আড্ডায় বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝে মাঝে মধ্যমণি হতেন। তার সঙ্গে প্রায়ই সংসদ লাইব্রেরিতে দীর্ঘ আলাপ হতো দেলোয়ার ভাইয়ের। আলমগীর ভাই বললেন, দেলোয়ার ভাই খুব শক্তভাবে মান্নান ভাইয়ের উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন। মান্নান ভুঁইয়াকে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ম্যাডাম জিয়ার পক্ষেই থাকবেন।

আলমগীর ভাইয়ের কথায় আমি একদিন নিজে গেলাম দেলোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমরা অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তিনি শ্লেষাত্মক কণ্ঠে বললেন, আপনাদের সব রাজনৈতিক পালোয়ানেরা এখন কই?

বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকতে তার দু’জন রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় হারিছ চৌধুরী ছিলেন পলিটিক্যাল সেক্রেটারি – ওয়ান। সংক্ষেপে পল-ওয়ান। আর অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় মোছাদ্দেক আলী ফালু পলিটিক্যাল সেক্রেটারি – টু। সংক্ষেপে পল-টু। বিদ্রুপ করে তখন দু’জনকে আবডালে ‘পালোয়ান’ ও ‘পল্টু’ বলতেন কেউ কেউ। তারই সূত্র ধরে দেলোয়ার ভাই বললেল, ম্যাডাম জিয়া ছিলেন সংসদনেত্রী আর আমি চিফ হুইপ। অনেক ব্যাপারে তার সঙ্গে আমার জরুরি আলাপের প্রয়োজন পড়তো। অথচ আমার মতো একজন সিনিয়র মানুষকে হারিছ পালোয়ান সহজে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে দিতো না। নানান উছিলায় বসিয়ে রাখতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক অপদস্ত বোধ করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তো কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়ে নেওয়া যায় না।

তিনি বললেন, এখন বাংলাদেশে যা চলছে সেটা গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিনাশী চক্রান্ত। ম্যাডাম জিয়া দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতীক। তাকে মাইনাস করার মাধ্যমে এই রাজনীতিকেই শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মান্নান ভুঁইয়া আমার বন্ধু হলেও তিনি ওই চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়েছেন। আমি আমার যতটুকু সাধ্য আছে তা নিয়ে ম্যাডামের পক্ষেই থাকবো।

আমি কথা সেরে ফিরে এলাম। ফেরার পথে কল্পনায় ফিরে তাকালাম এতোক্ষণ যার কথা শুনে এলাম সেই ক্ষীণদেহী ঋজু মানুষটির দিকে। যত উঁচুতে তাকাই তার মাথা ততো উঁচুতে উঠতে থাকে। আমার মাথায় কোনো টুপি ছিল না। থাকলে তা’ খসে পড়ে যেতো মাথা থেকে। মনে মনে তাকে জানালাম টুপিখোলা অভিবাদন।

ম্যাডাম জিয়া যেদিন গ্রেফতার হলেন সেদিন তিনি আদালত প্রাঙ্গনেই মান্নান ভুঁইয়াকে বহিস্কার এবং খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন। সে এক কঠিন দুঃসময়! সেই দুর্দিনকে কী অপরিসীম দৃঢ়তা, সাহস ও প্রজ্ঞায় তিনি অতিক্রম করেছেন, কীভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে, নিজের পরিবার-পরিজনদের বিপন্ন করে তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন তা’ বিএনপির রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ইতিহাসে এক বিষ্ময় হয়ে থাকবে। সে সময়কার অন্তরালের দু’-একটি ঘটনার উল্লেখ করে আজ তার স্মৃতিতর্পণ সারবো।

বেগম জিয়ার সর্বশেষ সরকার চার দলীয় জোটের সরকার হলেও মন্ত্রিসভায় ছিল কেবল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ম্যাডাম জিয়া জেলে যাবার পর সেই জামায়াত এক-এগারোর পক্ষ নেয় এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা করে বিএনপির অপকর্মের কোনো দায়ভার তারা নেবে না। ম্যাডাম বিভিন্ন সূত্রে কারাগার থেকে বার্তা পাঠিয়ে জামায়াতের এই অবস্থান পরিবর্তন করাতে সক্ষম হন এবং তারা বিএনপির সঙ্গে মিলে আন্দোলন করতে রাজি হয়। দেলোয়ার ভাইকেও জামায়াতের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি নেয়ার কথা বলেন ম্যাডাম।

তার এ বার্তা নিয়ে এক সন্ধ্যায় গেলাম দেলোয়ার ভাইয়ের বাসায়। আমার সঙ্গে আহমেদ আজম খান ও শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শুনলাম তিনি মানিকগঞ্জ গিয়েছিলেন এখন ফিরতি পথে আছেন। আমরা তার প্রতীক্ষায় বসে রইলাম। রাত ন’টার দিকে ফিরলেন তিনি। সারাদিন প্রোগ্রাম করে এসেছেন, বেশ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। আমরা তাকে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আসতে বললাম। তিনি বললেন, আমার বিশ্রাম পরে। আপনারা নিশ্চয়ই বড় বাড়ি থেকে কোনো খবর নিয়ে এসেছেন। ওটা আগে শুনি।

কথাটা তোলা মাত্র যেন দপ করে জ্বলে উঠলেন দেলোয়ার ভাই। তার ভাষ্য, জামায়াত এতো বড় বেঈমানি করতে পারে! তারা সরকারের অংশ ছিল দু’দিন আগেও। এখন বলছে কোনো দায় নেবে না! বিএনপিকে সিঙ্গেল আউট ও আইসোলেটেড করতে চায়। ওয়ান-ইলেভেন আনার পেছনেও ওদের সমর্থন ছিল। আন্দোলনে ওদেরকে আবার সাথী করা মানে নিজেদের কোমরে বিপজ্জনক ছুরি গুঁজে রাখা।

ওই সময়ে তার সঙ্গে যুক্তিতর্ক পেশ করতে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো না। তিন-চার দিন পর মাহমুদুর রহমানের বাসায় নৈশভোজ। দেলোয়ার ভাই আমন্ত্রিত হয়ে আসতে রাজি হলেন। মাহমুদ ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতেন তিনি ৷ বলতেন, “শিল্পপতি মুন্নু সাহেবের জামাতা হলেও মাহমুদুর রহমান সাহেব ভালো মানুষ।” যা হোক দেলোয়ার ভাই যথাসময়ে এলেন। একটু পর এসে উপস্থিত হলেন জামায়াতের তখনকার সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ। তাকে দেখেই দেলোয়ার ভাই একটু রুষ্ট চোখে তাকালেন আমার দিকে। আমি দুই হাত জোড় করে নিঃশব্দে ক্ষমা চাইলাম। কথা শুরু হলো। ধীরে ধীরে বরফ গলতে লাগলো। ডিনার শেষে দেলোয়ার ভাই এই বলে উপসংহার টানলেন, “ঠিক আছে আপনারা আগে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে একটা বিবৃতি দেন। তারপর আমরা কর্মসূচি নিয়ে একত্রে বসবো।”

ম্যাডাম জিয়ার কারামুক্তির পরের একটি ঘটনা। ২০০৯ সালের মার্চ মাস। চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর জ্যেষ্ঠ পুত্র এক সংবাদ-সন্মেলন করে বিএনপি ও বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য ও আপত্তিকর কিছু মন্তব্য করেন। দলের তরুণদের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ এর প্রতিবাদে চেয়ারপারসনের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা তানভীর সিদ্দিকীর বহিস্কার দাবি করেন। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের নেতাদের অনেকেই এই দাবির প্রতি জোর গলায় সমর্থন জানাতে থাকেন। আপত্তি তোলেন দেলোয়ার ভাই। তিনি বলেন, তানভীর সাহেবের এই ছেলেটি অপ্রকৃতস্থ। নিরাপত্তার কারণে তানভীর সিদ্দিকীর পক্ষে ছেলেকে নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য তাকে বহিস্কার করা ঠিক হবে না। তানভীর সিদ্দিকী ঝুঁকি নিয়ে সংস্কারবাদীদের বিরুদ্ধে ম্যাডামের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ সংস্কারবাদীরা দলে পুনর্বাসিত আর তানভীর সিদ্দিকী বহিস্কৃত হবেন এটা আমি মানতে পারিনা।

দেলোয়ার ভাই নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে তানভীর সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর কয়েক বছর পর তানভীর সিদ্দিকীকে দলে পূর্ণ মর্যাদায় ফিরিয়ে নিয়ে তাকে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নও দেওয়া হয়। তার আগেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন দেলোয়ার ভাই। কিন্তু তার মৃত্যুর পরেও প্রমাণিত হয়েছিল তার সেদিনের আবেগহীন সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এক-এগারোর সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটি ছিল বিএনপির জন্য খুব ক্রুশিয়াল। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও বন্দীমুক্তিসহ বেগম জিয়ার সব পূর্বশর্তই ফখরউদ্দীন-মইনুদ্দিনের সরকার মেনে নিয়েছিল। তথাপি দেলোয়ার ভাই ওই নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ঘোষিত ফলাফল বিএনপির জন্য লজ্জাজনক হবে ৷ আমরা লড়াই করে মাথা যেভাবে উঁচু রেখেছি তা হেঁট হয়ে যাবে।

পক্ষান্তরে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ সদ্য কারামুক্ত নেতাদের অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহনের পক্ষে ছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন হবে না এবং মার্শাল ল জারি করে আবার সকলকে জেলে নেওয়া হবে। এতোটা ধকল সামলানো যাবে না। ম্যাডাম জিয়া নিজে এবং তার পরিবার এক-এগারোর সরকারের ভিক্টিম। তিনি তাদের শাসন প্রলম্বিত হোক, এটা চান নি।

আমীর হোসেন আমুর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সংস্কারবাদী গ্রুপ কাছাকাছি সময়ে ম্যাডামের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন নির্বাচন না করার। তাদেরও কথা ছিল, বিএনপি অংশ না নিলে দুই বছরের জন্য মার্শাল ল হবে। এসময়ে ম্যাডামকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে রাখা হবে। আর হাসিনাকে বিচার করে শাস্তি দিয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহনের অযোগ্য করে দেওয়া হবে। তারপর হবে সুুষ্ঠু নির্বাচন।

ম্যাডাম জিয়া এ বন্দোবস্তে সায় দিতে পারেননি। তিনি চেয়েছেন ফখর-মইনদের দ্রুত বিদায়। এতে হাসিনা ক্ষমতায় এলেও সে অভি আচ্ছা। ম্যাডামের মন্তব্য ছিল: “হাসিনাও তো হেনস্তা হয়েছে। কিছুটা হলেও তো সে শোধরাবে।” এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে জামায়াতের নাছোড়বান্দা অবস্থানও নির্বাচনের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপিকে প্রভাবিত করে।

সেই নির্বাচনে অংশগ্রহনের ফলাফল আমরা সবাই ভোগ করেছি। অংশগ্রহন না করলে কী ফলাফল আসতো তা একমাত্র কল্পনা ছাড়া এখন নির্ণয় করা যাবে না। তাই আমি দেলোয়ার ভাইয়ের সেদিনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আজ কোনো রায় দিতে পারবোনা। আজ ১৬ মার্চ তার মৃত্যুদিনে কেবল অন্তরালের কিছু টুকরো ঘটনার উল্লেখ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।◾

লেখক পরিচিতি : মারুফ কামাল খান : সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক
ই-মেইল : [email protected]