কালীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ গাইড বই কেনার তাগিদ

0

শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ॥ কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বিনামূল্যের বই না পৌঁছালেও স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে লেকচার পাবলিকেশন্স কোম্পানির নোট গাইড বইয়ের তালিকা।

শিক্ষার্থীদের হাতে অবৈধ নোট গাইডের এই তালিকা তুলে দেওয়ার কাজটি করছেন অনিবন্ধিত কথিত নামধারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়।

জানা গেছে,মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মান্দারবাড়িয়া চাঁদপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান কামাল। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানির নোট গাইড এ বছর বিদ্যালয়সমূহে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বর্তমান সরকার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিচ্ছে। প্রতিটি শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি গ্রামার বইও বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। অথচ লেকচার কোম্পানির বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি ব্যাকরণ এবং সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেকচার পাবলিকেশন্স কোম্পানির প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সহায়তায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের তালিকা। এখনো পর্যন্ত সরকারি বিনামূল্যের বই পরিপূর্ণরূপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি। অথচ চড়া মূল্যের অবৈধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সমিতিভুক্ত শিক্ষকরা। আর ওই তালিকা ধরে বই কিনতে লাইব্রেরিগুলোতে ছুটছেন অভিভাবকরা। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির সহায়তায় হাট বারোবাজার, বিএইচএবি মুন্দিয়া, একতারপুর, চাপরাইল, এবং বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের তালিকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি স্কুলগুলোতেও করা হবে বলে জানা যায়।

সাজিদুর রহমান নামের একজন অভিভাবক জানান, ‘আমার সন্তান দশম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। তার স্কুল থেকে হলুদ রঙের একটি বইয়ের তালিকা দিয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী বইগুলো কিনতে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হবে আমার । স্কুলে সরকারি বই না পড়িয়ে কেন নোট গাইড পড়ানো হবে? স্যারেরা তো ঠিকমতো ক্লাসই করায় না। ব্যবসা খুলে বসেছে।’

কালীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কামাল জানান,এখনো বই চূড়ান্ত হয়নি। কোম্পানির লোক স্কুলে বইয়ের তালিকা দিতে পারে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সমিতির মাধ্যমে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা( অ.দা) দীনেশ চন্দ্র পালের কাছে অবৈধ নোট গাইড বইয়ের তালিকা স্কুলে স্কুলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নেয়। সরকার বই দিচ্ছে যেখানে, সেখানে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর কোনো নিয়ম নেই। আমি রোববার বিষয়টি দেখছি।

বর্তমানে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, স্কুলে নোট গাইড চালানোর নিয়ম নেই। কোনো স্কুলে নোট গাইড এর তালিকা সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা সেটিও আমার জানার বাইরে।

ঝিনাইদহ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ.বি.এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ নোট গাইড চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।