ক্ষমতায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে নির্বাচনে আসুন : মির্জা ফখরুল

যশোর জেলা বিএনপির সমাবেশে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর জেলা বিএনপির সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করে নির্বাচন দিন। সরকারে থেকে দল গঠন করবেন, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। রাজনীতি করতে চাইলে ক্ষমতার বাইরে গিয়ে করুন। জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসুন আমরা স্বাগত জানাবো। ক্ষমতায় থেকে রাজনীতির করার চিন্তা করবেন না।

মঙ্গলবার যশোর টাউন হল মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। আমরা সেদিন মুক্ত হতে পারবো যেদিন ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবো। আজকে দেশের অবস্থা ভালো না। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কোন দিন সমস্যার সমাধান হবে না। দ্রব্যমূল্য কমবে না, কমবে কীভাবে এখনো ফ্যাসিস্টের দোসরা বসে আছে। সুশাসনের দিকে নজর দিন। আজকে পুলিশ প্রশাসন কাজ করতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখেন কেন তারা কাজ করতে পারছে না। যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না তাদের কথায় গুরুত্ব দেবেন না।

বিএনপির মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনি দেখুন দেশের মানুষ কীভাবে আপনার দিকে চেয়ে আছে। তারা আপনাকে সামনে দেখতে চায়। শুধু মানুষ না দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে চায়। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে আপনার নেতৃত্বে তারা ভোটাধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে। তারা আপনার নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যের শুরুতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী যশোর তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের উন্নয়নের রূপকার ও কারিগর তরিকুল ইসলামকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সংস্কার গুলো কারা করবে ? জনগণ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংস্কার করবে। জনগণের প্রতিনিধি যদি না থাকে পার্লামেন্ট যদি না থাকে তাহলে সমগ্র জনগণের কথা আসবে কি ভাবে? তাই নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা দরকার যেখানে যেখানে পরিবর্তন দরকার সেখানে সংস্কার ও পরিবর্তন করুন। আমরা সংস্কারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু দ্রুত নির্বাচন দিন। আপনাদের সাথে কোন বিরোধ করতে চাই না, কিন্তু দয়া করে সংস্কার কাজ শেষে করে নির্বাচন দিন। আমরা খুব ভালো করে জানি নির্বাচনের কথা বলে ১/১১ তে একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সংস্কারের নামে বড় বড় কথা বলে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘুরে দাঁিড়য়েছিলেন বলে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে অনেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে করার কথা বলছেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোর নির্বাচন আগে হলে, পাড়া মহল্লায় আওয়ামী লীগের দোসররা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। এজন্য আমরা বলেছি কোন ভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা যাবে না। এই সভা থেকে পরিষ্কর বলতে চাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে এই দেশের জনগণ কোনভাবেই মেনে নেবে না।

বিএনপি মহাসচিব অন্তর্বর্তীকালীন সরকরের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি, আপনি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের গৌরব। আপনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বিশ্বের অনেক নেতা অর্থনীতিবিদরা সম্মান শ্রদ্ধা করে। আপনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম আপনি সুবিবেচকের মতো দ্রুত মানুষের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আমরা এখানো আশাবাদী অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কারণ নির্বাচনে হলে আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবো। সরকার গঠন হবে সেই সরকার হবে জনগণের সরকার। জনগণ বিশ্বাস করে যত দ্রুত নির্বাচন করবেন তত দ্রুত দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, ড. ইউনূস হঠাৎ করে বললেন যা যা আলোচনা হয়েছে সব জনগণকে জানিয়ে দেব। আপনি নতুন করে কি জানাবেন, আমরা যা করছি এবং যা বলছি সবই প্রকাশ্যে। প্রতিটি কথা জনগণ জানে, আমরা তাদের কথা বলি, তাদের কথা নিয়ে আসি। জনগণের ভয় আমাদের দেখাবেন না কারণ, জনগণ আমাদের সাথে আছে, আমরা তাদেরকে সাথে নিয়ে চলি। আজকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, দেশে এখন নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কখন নির্বাচনের পরিবেশ আসবে? যখন দেশের মানুষ অস্থির হয়ে যাবে তখন নির্বাচনের পরিবেশ আসবে?

মির্জা ফখরুল বলেন, যশোরে মানুষ লড়াকু, নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন কিন্তু মাথা নত করেননি। দল ভাঙার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নির্বাসিত করেছে। কিন্তু তারপরও আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম দল ভাঙতে দেইনি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় এলে যশোরের নওয়াপাড়াসহ দেশের সকল বন্ধ পাটকল এবং সকল কলকারখানা চালু করা হবে। যশোরের ভবদহের স্থায়ী সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো বিদেশে চিকিৎসাধীন আছেন। এই মহীয়সী নারী কোন দিন নিজের ও পরিবারের দিকে তাকাননি। তিনি গণতন্ত্রের জন্য বছরের পর বছর লড়াই করেছেন। স্বৈরচার এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতি হিংসার কারণে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি আপোষ করেননি। তিনি মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অতি দ্রুত সময়ে তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন , বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, টি এস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, অধ্যাপক ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান, মারুফুল ইসলাম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ কায়সার ইস্তি প্রমুুখ।