ইবিতে তদবিরে পোষ্য কোটায় পাস মার্ক ছাড়াই ভর্তি

0

তানিম তানভীর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে পোষ্য কোটা বাতিল করেছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এখনও বহাল রয়েছে এই কোটা। ন্যূনতম পাস মার্ক পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে পারছেন পোষ্য কোটাধারী শিক্ষার্থীরা। এতে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। ‘জিএসটি’র কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এই কোটা বাতিল না করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ন্যূনতম পাস মার্ক পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন পোষ্য কোটাধারীরা। ২০২৩-২৪ বর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়। এছাড়াও ইবির ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়। ফলে অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও ২৪ ও ৩০ নম্বর পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন পোষ্য। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিচ্ছে প্রশাসন। এমনকি ন্যূনতম পাস মার্ক না থাকলে ভর্তি কমিটির মিটিং করিয়ে নম্বর আরো কমিয়ে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

শর্ত শিথিলের জন্য বিগত প্রশাসনের আমলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি ও দীর্ঘ দিন ধরে কর্মবিরতি করেছেন। এর বিপরীতে তখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তৎকালীন প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেয়নি। এছাড়া শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শর্ত শিথিলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে ২০২৩-২৪ বর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করে চরম বৈষম্যমূলক চিত্র দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা ও আইসিটি সেলের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ সায়েন্স বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ছিল ১৮,৭৫২তম (গুচ্ছ পরীক্ষার পজিশন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে একই বিভাগ থেকে ৪৮,৫৯৮তম পজিশনে থেকেও পোষ্য কোটায় প্রথম সারির ‘আইসিটি’তে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী।

এছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে সর্বশেষ ৬,০১৩তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী ২৬,৮১২তম পজিশন নিয়েও পোষ্য কোটায় আরেক প্রথম সারির ‘আইন’ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বাণিজ্য বিভাগ থেকেও সর্বশেষ ৫,০৬৬তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ১৯,৩০০তম পজিশন নিয়েও পৌষ্য কোটায় হিউম্যাস রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এমনকি অন্য সকল কোটার তুলনায়ও সর্বনি¤œ মার্ক নিয়ে পৌষ্য কোটায় ভর্তি নিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে শিক্ষকদের অবস্থান জানতে চাইলে এ বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানান ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কেন্দ্রীয় মিটিংয়ে পোষ্য না রাখার বিষয়ে সুপারিশ ও প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি জিএসটি না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও বাতিল করে দেব।