যশোরে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ও গুজব ছড়ানো বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে : জেলা প্রশাসক

0

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ যশোর জেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, মোবাইলে লাইভে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী ও যারা শহরের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

যে সব সন্ত্রাসী হঠাৎ হঠাৎ মোটরসাইকেলে শহরে ঢুকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকার বিরোধী ও সমাজ বিরোধী পোস্ট দিচ্ছে বা লাইভ করছে তাদের বিরুদ্ধে অতীতের অপরাধ বিষয়ক বিভিন্ন মামলায় শাাস্তির আওতায় আনার জন্যেও সিদ্ধান্ত দেন সভার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। একই সাথে শহরের সন্ত্রাস কমানো ও কিশোর গ্যাংয়েরর দৌরাত্ম্য কমিয়ে আইন শৃঙ্খলা উন্নতির জন্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেন তিনি।

এর আগে সভায় দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত জানান, শহরের সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, হঠাৎ হঠাৎ কয়েকজন ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করে জেলা ও শহরকে অশান্ত করার অপচেষ্টা করছে। পতিত সরকারের পক্ষে, বর্তমান সরকারের বিপক্ষে তারা বিভিন্ন উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পোস্ট করছে, সন্ত্রাসীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, মানুষ থানায় অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছে জানিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ সময় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, যারা এ জাতীয় অপরাধ করছে তারা নিঃসন্দেহে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। কিন্তু তারা হঠাৎ হঠাৎ এসে ৪/৫ মিনিটের মধ্যে কাজ করে বা পোস্ট দিয়ে সরে যাচ্ছে, ফলে তাদের ধরা যাচ্ছে না। আর শনাক্ত করা গেলেও অতীতে এ জাতীয় অপরাধে ডিজিটাল নিররাপত্তা আইনে আটকানো হতো, এখন তো সরকার ও জনগণ সে আইনটাকে প্রয়োগের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। ফলে শাস্তির আওতায় আনতে সমস্যা হচ্ছে।

এ সময় জেলা প্রশাসক ও জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সাভাপতি মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, যারা এ জাতীয় কাজ করছে তারা নিশ্চয়ই বিগত সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, তারা জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে, তারা বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা, মামলা বা প্রতিহত করেছিল এবং এখনো রাষ্ট্র ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের অতীতেও অপরাধ কর্মকান্ড রয়েছে, সে সব বিষয়েও আইন প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনীকে সেভাবে নির্দেশ দেন এবং প্রয়োজনে অভিযান চালানোর নির্দেশও দেন। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন। তাছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাথ দখল উচ্ছেদ, সরকারি ভবনের দেওয়াল সংলগ্ন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অস্থায়ী বা স্থায়ী দোকান ঘর উচ্ছেদের জন্যেও নির্দেশ দেন। আসন্ন রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ব্যবসাায়ীরা যেনো বাজার অস্থিতিশীল না করতে পারে, মজুতদারি না করা হয় সে বিষয়েও চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তা দেন।

এ সময় তিনি জানান, দোকানে মাল যতই কম থাকুক নির্ধারিত দামেই তা বিক্রি করতে হবে, মাল নেই বা সরবরাহ কম বলে বেশি দাম নেওয়া যাবে না। যতক্ষণ মাল থাকবে ততক্ষণ বিক্রি করতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা যাবে না। তাহলে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

গতকাল রোববার সকালে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এসব কথা হয়। যশোরর কালেক্টরেটের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। সভায় জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা, শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা, সন্ত্রাসীদের অপচেষ্টা ও অপপ্রচার, গুজব ছড়ানো, পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রচেষ্টাকারীদের অপচেষ্টা, জেলা ও শহরে বেড়ে যাওয়া চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ছুরি চাকুর ব্যবহার বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনাা হয়। এ সব পরিস্থিতে করণীয় দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক মাসব্যাপী মশক নিধন কর্মসূচি শুরু হবে। কোনো এলাকা বাদ পড়লে সে এলকার মানুষ যেনো পৌরসভাকে অভিযোগ আকারে জানায়। তাছাড়া শহরে কুকুরের উৎপাত বেড়ে গেলেও কুকুর মারা নিষেধ থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ একপ্রকার অসহায়। কখনো কখনো কুকুর ধরে দূরবর্তী কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসা ছাড়া তাদের করার কিছু নেই বলেও জানানো হয় সভাকে।

সভায় চৌগাছার নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য উল্লেখ করে বিজিবির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার বিষয়ে অভিযোগ জানালে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা এই তথ্য সরবরাহ করেছে আগে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার।

বিজিবির সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা এ সময় দাবি করেন,এ সময় বলেন, ডলার ধরার জন্যে তাদের বাহিনী সাঁতরিয়ে নদীর মধ্যে দিয়ে নদীতে নৌকায় করে পাচার হওয়া ৩০ হাজার ডলার উদ্ধার করে। ওই সময় বাহিনীর নিয়মানুসারে ভিডিও কলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা দেখানো হয়। নদীর মধ্য থেকে অভিযানকারী দল সে ডলার সরাতে পারেন না বা সে সুযোগ ছিল না।

তিনি দাবি করেন, এসব ক্ষেত্রে পাচারকাররীরা হয়তো সব ডলার বা মাল না এনে নিজেরাও সরিয়ে সংবাদ মাধ্যম বা স্থানীয়দের কাছে বিজিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। চৌগাছার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি জানান, অত ভোরে বিজিবির গোপন অভিযান যারা আগেই জেনে গেছেন প্রথমে তাদের বিষয়েই আগে খোঁজ নেওয়া দরকার, কোথায় তাদের কানেকশন। তিনি আরও বলেন, সভায় যখন তিনি উপস্থিত আছেন সেই সময় তার বাহিনী ধান্যখোলা সীমান্তে ১৯৬ বোতল ফেনসিডিলসহ ২জনকে আটক করেছে, ভিডিও কলে তিনি তা অবহিত হয়েছেন।

এ সময় সভায় মাকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন জানান, তার বাহিনীও সভাচলাকালীন সময়ে গাড়ি তল্লাশি করে ৬ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ্উদ্ধার করেছে।

সভায় খুব বেশি আলোচিত হয় ৩টি ডাকাতির ঘটনা। এ সময় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, জেলায় প্রায় সব পুলিশ নতুন, কাজ করতে কিছু সমস্যা তাদের হচ্ছে, তিনি সবার সহযোগিতা চান। তাছাড়া ওই ডাকাত গ্যাংয়ের কেউ এখানকার নয়। তারা সংঘবদ্ধ চক্র ঢাকা কেন্দ্রিক বেচাকেনা ও বসবাস, দুর্ধর্ষও বটে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও যশোর পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, জেলা পিপি ও বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, এন.এস.আইয়ের যুগ্ম পরিচালক আবু তাহের মোহাম্মদ পারভেজ, র‌্যাব-৬ এর ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর লুৎফর রহমান, আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট মো. আল আমিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন খোকন, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।