কিছু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই অন্যদের অপেক্ষা

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম ৫দিনে কিছু শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেলেও অধিকাংশ অপেক্ষায় রয়েছে। বিশেষ করে মাধ্যমিকের বাংলা মাধ্যমের অষ্টম ও দশম শ্রেণির কোন বই যশোরে আসেনি। এছাড়াও মাধ্যমিকের ইংরেজি মাধ্যম ও ভোকেশনালের কোন বই পায়নি শিক্ষা অফিস। জেলা শিক্ষা অফিসের প্রাপ্তির হিসেবে এখনো শূন্য দাখিলের ৬ষ্ঠ ও ৮ম, এবতেদায়ির চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই। এর বাইরে অন্য শ্রেণির ৮শতাংশ বই যশোরে পৌঁছেছে।
নতুন বইয়ের জন্য প্রতিদিনই শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করছেন শিক্ষকরা। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শিক্ষা অফিসে পড়েই থাকছেন। নতুন বই প্রাপ্তির সাথে সাথে স্কুলগুলোতে সবরাহ করছে শিক্ষা অফিস। তবে সকল শিক্ষার্থীর হাতে এক সাথে বই তুলে দিতে না পেরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন শিক্ষকরা। বইয়ের কারণে শ্রেণি কার্যক্রম পিছিয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
জেলা শিক্ষা অফিস জানায় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা মিলে এবারের শিক্ষাবর্ষে যশোরের আটটি উপজেলায় বইয়ের চাহিদা ৪৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৬। সেখানে গত রোববার বই এসেছে ৪ লাখ ৮০ হাজার। যা চাহিদার ৮ শতাংশ মাত্র। এরমধ্যে ৩ লাখ ৪৩ হাজার বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাপ্তির ৮৪ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরমধ্যে এবতেদায়ী ১ম ও ২য় শ্রেণির ৩৪ শতাংশ, এবতেদায়ি ৩য় শ্রেণির ২৫ শতাংশ বই এসেছে। এছাড়া মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২৯ শতাংশ, ৭ম শ্রেণির ৬৫ শতাংশ, নবম শ্রেণির ২০ শতাংশ বই যশোরে পৌঁছেছে। দাখিল ৭ম শ্রেণির ৭ শতাংশ , ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ৩ শতাংশ বই পেয়েছে শিক্ষা অফিস।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারের শিক্ষা বর্ষে যশোরের আটটি উপজেলায় মোট বইয়ের চাহিদা ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫০। এরমধ্যে গত রোববার পর্যন্ত বই প্রাপ্তি হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৪।
বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট যশোর জেলা শাখার সভাপতি উপাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ইতিহাস বিকৃত করেছে। সেই বিকৃত ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করে। যার ফলে এতদিন কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে সকল শিক্ষার্থী মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি। আবার নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ফ্যাসিস্টের বিদায়ের পর পাঠ্য বইয়ে সংযোজন – বিয়োজনে এবার বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। বই পেতে দেরি হলেও শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এটাকে ইতিবাচক দেখছেন। দেরিতে হলেও নতুন বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বিষয় সঠিক টা জানতে পারবে।
জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজিব মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতা আসার পর রাতারাতি পাঠ্য পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের সামনে বিবৃত ইতিহাস উপস্থাপন করে। বাধ্য হয়ে এতদিন আমরা শিক্ষকরাও তাদেরকে অনেক ভুল বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছি। বিগত দিনের সে সকল বিষয়াদি বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে সঠিকটা উপস্থাপন করা হয়েছে এবারের বইয়ে। সময় মত বই যাতে শিক্ষার্থীরা না পায় সে জন্য ছাপাখানা মালিকদের মধ্যেমেও চক্রান্ত চলেছে। তবে দেরিতে হলেও শিক্ষার্থীরা ২০১২ সালের পাঠ্যবইয়ে ফিরতে পারছে, এটা আনন্দের।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হাসান বলেন, বই ট্রাক ট্রাক আসছে। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সকল বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, কারিকুলাম পরিবর্তন এবং পাঠ্যবইয়ে সংযোজন বিয়োজনের কারণে এবারের শিক্ষা বর্ষে বই ছাপাতে দেরি হয়। হয়তো সে কারণে বই পেতে দেরি হচ্ছে।