যশোরে বিএনপির বিজয় দিবসের আলোচনা সভা, বাংলাদেশে কোন দিন রায়োট হবে না : ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, এ দেশে সংখ্যালঘুরা মায়ের কোলে থাকা শিশুর মত নিরাপদ। বিএনপি নেতা-কর্মীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে দিনরাত সর্বাত্মক কাজ করছে। সংখ্যালঘুকে ব্যবহার করে মিডিয়ায় কুৎসা রটিয়ে গোয়েবলস’র নীতি ফলো করে কোন দেশে রায়োট বাধানো যায় না। বাংলাদেশে কোন দিন রায়োট হবে না। আমরা সাম্প্রদায়িকতা বিশ্বাস করি না। যেমন গঙ্গা যমুনা তেমনি আমাদের বাংলাদেশে মুসলমান-হিন্দু ভাই ভাই, এটাই আমাদের সম্প্রীতি। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এটি আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
তিনি পাশের দেশের দিদিকে (মমতা ব্যাণার্জী) উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি নিজে বাংলাদেশের যশোরে আসেন, দেখে যান আমাদের নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত কীভাবে আপনার ধর্মের লোকদের নিরাপদে রেখেছে। ফিরে গিয়ে আপনার দেশের মিডিয়াকে সত্যটি বলেন।
মহান বিজয় দিবসের ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার যশোর টাউন হল মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, আমরা এখনো ক্ষমতায় আসিনি। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগণের ভোটের প্রয়োজন আছে। আমি আপনাদের নির্দেশ দেব জনগণের মন জয় করেন, তারা যেন আপনাদের ওপর আস্থা রাখে।
আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৬ বছরের নির্যাতন থেকে মুক্তি হয়েছি। শত্রু কিন্ত বসে নেই। সুতরাং আপনারা আনন্দ উল্লাসে মেতে থেকেন না। কেউ যদি জনগণের সাথে খারাপ আচারণ করে থাকেন এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান।
আওয়ামী লীগ থেকে দলের সকল নেতা-কর্মীদের সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, একাত্তরের এবং পঁচাত্তরে শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জাতিকে উদ্ধার করেছিলেন সেভাবে নব্বইয়ে বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরচারকে হটিয়ে জনগণের আশা ভরসার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিলেন। এবার ২০২৪ এ তারেক রহমান জনগণের সেই আশা ভরসার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে দেশ যখনই সংকটে পড়ে জিয়া পরিবার একমাত্র ত্রাতা হিসেবে উদ্ধার করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গণভবন প্রমাণ করে জনরোষের কাছে কোন কিছু টিকানো যায় না। আপনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন, আপনারা চামচারা কে কোথায় আছে আল্লাহ জানেন। হয়তো কিছু দিন পর আওয়ামী লীগ ভেসে উঠবে। সে দিনের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি আরো বলেন, ৭ মার্চ শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দর বার্গেনিং (দর কষাকষি) করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণ যদি স্বাধীনতার ঘোষণা হতো তাহলে উনি (শেখ মুজিব) ইয়াহিয়া খানকে আলোচনা বসার কথা কিংবা ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলতেন না। আবার হুংকার ছেড়ে সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাবার কথা বলতেন না। আবার সেই ভাষণ জয় পাকিস্তান বলে শেষ করতে না।
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে ১১ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনায় বসলেন। এরপর ২৪ মার্চ শেখ মুজিবকে জিজ্ঞেস করা হলো আলোচনার অগ্রগতি কি? তখন তিনি বললেন অগ্রতি না হলে আলোচনা চলছে কিভাবে? তার অর্থ উনার প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার পথ ঠিক হয়ে গেছে। ২৫ তারিখের বৈঠকের পর উনার দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ নির্দেশনা জানতে চাইলে উনি যার যার অবস্থান থেকে আত্মগোপনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি টেপ রেকর্ডার এনেছি আপনি (শেখ মুজিব) স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন শেখ মুজিব বললেন এই টেপ রেকর্ড যদি থাকে তাহলে আমার ফাঁসির দড়ি তৈরি হয়ে যাবে। সুতরাং আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারবো না।’
ইকবাল হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ চাপাবাজিতে বরাবরই প্রথম। মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যবসা। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এসেছিল ২৬ তারিখে। ২৫ তারিখে পাকিস্তানের বর্বরোচিত হামলার পরে আওয়ামী লীগের সবাই লেজ তুলে পালিয়েছিল মামুর বাড়িতে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের খুঁজে পায়নি। তখন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর সবাই যুদ্ধের ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটাই হলো স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করি। নিয়াজি আত্মসমর্পন করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি নেই। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে অপমানের ছিল। এরই জের ধরে মোদী (ভারতে প্রধানমন্ত্রী) বলছে এটা ভারতে বিজয়। আমরা সাত কোটি মানুষ যুদ্ধ করেছিলাম সেটি আওয়ামী লীগের দোষে ব্যহত হয়ে গেছে।
টুকু আরো বলেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের দোকান খুলে ১৬ বছর সেই দোকানে নানান রকম মলম বিক্রি করেছে। ইতিহাসকে বিক্রিত করে মুক্তিযুদ্ধ তার বাবার এবং তার ভ্যানেটি ব্যাগের সম্পদ বানিয়েছিল। আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি, গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৪ আগস্ট পর্যন্ত গাছের পাতায়ও আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্ত আগস্টের পরে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের এই চরিত্র নতুন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত গাছের পাতায় বাকশাল দেখেছি। কিন্তু যেই ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হলো কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। ঢাকা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নেতার (শেখ মুজিব) লাশ পড়েছিল কেউ দেখতে আসলো না। এখন তারা পালিয়েছে আমরা কিন্তু অবাক হইনি। কারণ আওয়ামী লীগ মানে কিছু হলেই লেজ তুলে পালায়। আর দৌড় দেয় তাদের মামুর বাড়িতে। এবারও তারা সেই মামুর বাড়িতে পালিয়েছে।
আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিগত ১৬ বছর দেশের মত যশোর তথা এই জনপদের মানুষ গণতন্ত্র ও মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবার জন্য নিরন্তর লড়াই করেছে। গেল ৫ আগস্টের পর থেকে জনগণ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। আজকে জেলা বিএনপির বিজয় দিবেসের এই আয়োজনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি মুক্ত বাংলাদেশের প্রতীক মাত্র। বিগত ১৬ বছরে যশোরের এই মানুষেরাই তাদের শতাধিক স্বজনকে হারিয়েছে। তাদের পাঁচ শতাধিক স্বজনরা পঙ্গত্ব বরণ করেছে।
জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশাররফ হোসেনের কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। এসময় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, চৌগাছা পৌর বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা আওলিয়ার, মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শহীদ ইকবাল হোসেন, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী েেগালাম হায়দার ডাবলু, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
ফ্যাসিবাদমুক্ত যশোরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা শুরুর অনেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় টাউন হল মাঠ। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আলোচনা সভা জনসভায় রূপ নেয়। জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ ব্যানার ফেস্টুন প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে নেতা-কর্মীরা আলোচনা সভায় অংশ নেন।