মোবারকগঞ্জ চিনিকলে নিয়োগ বাণিজ্যের ভিডিও ফাঁস

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ চিনিকলে (মোচিক) নিয়োগ বাণিজ্যের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে হৈ-চৈ পড়ে গেছে।
মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের ঘনিষ্ট বন্ধু গোলাম রসুলকে ভিডিও ফুটেজে বলতে শোনা গেছে, সংসদ সদস্য, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির তদবিরে তিনি কীভাবে চিনিকলে শ্রমিক কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। এই প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি ভিডিওতে নিয়োগ বাণিজ্যের এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ক্যান্টিনের পাশে একটি গোল ঘরে বসে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে সাথে কথা বলছেন গোলাম রসুল। সেখানে কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মেহেদী হাসান সজলকেও দেখা গেছে। ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে গোলাম রসুলকে বলতে শোনা যায়, ১০১ টা লোক। এইবার ভাগ করো, সংসদ সদস্য ৫০টা চলে গেল, কাউন্সিলর সজলকে দেখিয়ে বলছেন, এরা চলে গেল ১৭, তাহলে কয়টা থাকে? পাশ থেকে একজন বললেন তাহলে থাকে আর ৩৪টা। এবার আমার (গোলাম রসুল) শ্রমিক ইউনিয়নে ১৫টা বাদ দাও। এবার থাকে ১৯টা। এবার এসো এনএসআই, ডিজিএফআইসহ প্রশাসনিক তদবির, সেখানে গিয়েছে ৩টা। এবার হেড অফিসে গেছে ৫টা। পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, তাহলে তো আপনার থাকছেই না। উত্তরে শ্রমিক নেতা গোলাম রসুল বলেন, আমি ওইটুকুর ওপরেই দাঁড়িয়ে আছি।
ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, অথচ অন্য নেতারা হলে সংসদ সদস্যকে ১০টা দিয়ে এদিকে মেইন-টেইন করে চালিয়ে চলে যেত। এজন্য কালকে আমি সংসদ সদস্যকে বলেই ফেলিলাম, যে অনেক তেল হয়ে গেছে। এরপর যদি বেশি চাপাচাপি করো, তাহলে আমি নিয়োগ বন্ধ করে দেবো। আমার আর একবছরই আছে, আমি ওভারটাইম দিয়ে চালিয়ে যাবো। আমিতো ওভারটাইম বন্ধ করে দিয়ে অনেক মেকানিজম করে কাজটা করলাম।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক গোলাম রসুল ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের প্রভাব খাটিয়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলে দেদারছে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। এভাবে তিনি রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার কথার বাইরে গেলে চিনিকলের শ্রমিকদের কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের খড়গ।
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ক্যান্টিনের পাশের এই গোলঘর আওয়ামী লীগের ১৬ বছর রীতিমত টর্চার সেলে পরিণত হয়। টানা দুইবার বিনা ভোটে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছেন গোলাম রসুল। তার বিরুদ্ধে ২৪ জন সিডিএর কাছ থেকে পদোন্নতির নামে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে, যা চিনিকলটির হেড অফিস তদন্ত করছে। একাধিক মামলার আসামি দুর্নীতিবাজ গোলাম রসুল এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় চিনিকলের নির্যাতিত শ্রমিক কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে গোলাম রসুল পলাতক থাকায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপক সাইফুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, শ্রমিক নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয়ে গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে ২৪টি অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এসব লেনদেনের সাথে আমরা বা মিলের কোনো কর্মকর্তা জড়িত না।