কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় দেড় কোটি টাকার সৌর বিদ্যুতের সড়কবাতি জ্বলছে না ঠিকমত

0

 

কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ ) সংবাদদাতা॥ কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন প্রকল্পের অধীনে ১১২টি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। সৌর বিদ্যুতের এ সড়ক বাতি বছর পেরুতে না পেরুতেই হারাতে বসেছে তার কার্যকারিতা। সন্ধ্যার দিকে বাতিগুলো জ্বললেও রাত বাড়ার সাথে সাথে কমে যায় আলো। রাতের আঁধার কাটার আগেই তা নিভে যায়। তখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সড়ক।
সূত্র জানায়, কালীগঞ্জ পৌরসভাকে অন্ধকার মুক্ত রাখতে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১২ টি সৌর বিদ্যুতের খুঁটি তৎকালীন পৌর কাউন্সিলরদের দেখানো নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হলেও এর সুফল সেভাবে পাচ্ছে না পৌরবাসী। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সৌর বিদ্যুতের খুঁটিসহ সড়ক বাতি স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অর্ধেক আর বাকিটা আগস্ট মাসে সম্পন্ন করে মেসার্স কুন্ডু ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান । পৌর এলাকায় প্রতিটি সৌর বিদ্যুতের খুঁটি নির্মাণে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। কিন্তু সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতিগুলোতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় অল্প দিনেই তা নষ্ট হতে চলেছে। সড়কে সৌর বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অর্থলোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১২ টি সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপনের আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অধীনে কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় প্রায় ১৩০ টি সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। যার বেশির ভাগ বাতিই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ পৌরসভার একজন কর্মচারী জানান, সৌর সড়কবাতি প্রকল্প কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ও বর্তমান প্রকৌশলী ঝিনাইদহের এক প্রকৌশলীর সহায়তায় এস্টিমেট করেন। পরে পৌর পরিষদের সহায়তায় পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করান। একটি খুঁটি স্থাপন করতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়।
শিবনগর কাচারি জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন শাকিল আহমেদ জানান,ভূমি অফিস এলাকায় দুইটি নতুন সৌর বিদ্যুতের বাতি দেওয়া হয়েছে। যা ফজরের আজানের আগেই নিভে যায়। ভূমি অফিসের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক বাড়তিটি জ্বলে না। আমাদের মসজিদের কর্নারে থাকা সড়ক বাতিটি মাঝেমধ্যে জ্বলে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কবির হাসান জানান, এখন শীতকাল হওয়ায় রাত বড়। যে কারণে সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতিগুলোতে শেষ রাতের দিকে আর চার্জ থাকে না। তাই বাতিগুলো হয়তো নিভে যায়। আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নিয়েছি। এরপরও যদি কোথাও কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে সেগুলো ঠিক করা হবে।প্রতিটি খুঁটির ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার টাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
কালীগঞ্জ পৌরসভায় সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি স্থাপনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কুন্ডু ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী প্রলয় কুন্ডু জানান,মানসম্মত সোলার প্যানেল দিয়েই সৌর সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এই সড়ক বাতির কোন ত্রুটি থাকলে আমরা তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিক করে দেব। তবে শীতের কুয়াশার কারণে আলো কিছুটা কম হতে পারে। আর এটা যদি পৌর কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করে তাহলে আর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারলে আমরা ওইগুলো মেরামত করে দেবো। কালীগঞ্জের পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, সৌর সড়ক বাতির আলো ঠিকঠাক জ্বলছে না- এমন অভিযোগ আমার কাছেও আছে। আপনি বললেন, আমি ব্যাপারটি খতিয়ে দেখব।