যবিপ্রবির এপিপিটি বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র পেশ

0

যবিপ্রবি সংবাদদাতা ॥ শিক্ষার্থীদের অছাত্রসুলভ আচরণের মুখে পদত্যাগ করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(যবিপ্রবি) এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ।
এগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এর নাম পরিবর্তনের দাবিতে গত ২১ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তন করতে একটা এক্সপার্ট কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির মিটিংয়ে বিশেষ অনুমতিক্রমে ছাত্ররাও তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। কমিটির অগ্রগতি জানতে শিক্ষার্থীরা গত ২৩ নভেম্বর বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে যায়। সেখানে তারা চেয়ারম্যানের সাথে অছাত্রসুলভ আচরণ করে। এমনকি পদত্যাগের জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেয়। তাদেও চাপের মুখে পদত্যাগ করেন চেয়ারম্যান।
এপিপিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, ‘শুরু থেকেই আমাদের বিভাগের নাম ও ডিগ্রি ছিল এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি। যা পরে পরিবর্তন করে এগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়। সিলেবাস ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও নামের অসামঞ্জস্যের কারণে সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা। তাই নাম ও ডিগ্রি সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলাম। প্রশাসনের অগ্রগতি জানতে গত ২৩ নভেম্বর আমরা চেয়ারম্যান স্যারের কাছে যাই। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে অসদচারণ করেন এবং সকল বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঐ সময় আমাদের একজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান স্যারের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের অনাস্থা আপনার প্রতি তবে আপনি পদত্যাগ করুন। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগতকারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।’
এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘ছাত্ররা আমাকে ১০ মিনিটের ভিতরে মিটিং এর সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে বলে। নিয়ম বর্হিভূত হওয়ায় আমি অপাররগতা প্রকাশ করি। এরপর তারা আমাকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যেহেতু ছাত্ররা আমাকে চায়না তাই আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করি।’
ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই আমরা ৫ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারের নির্দেশনায় এক্সপার্ট কমিটি গঠন করা হয় এবং তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিশেষ বিবেচনায় সুপারিশ করেছেন। এরপর বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করে এবং তার পদত্যাগের দাবি তোলে। পরিণতিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁর অবসর নিতে তিন বছর দুই মাস বাকি, তিনি আত্মসম্মানের কারণে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এই ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে, আমি মনে করি শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমাদের কোন ভুল বা ত্রুটি থাকলেও, এটি শিক্ষার্থীদের মবের শিকার হওয়ার যৌক্তিকতা দেয় না। শিক্ষার্থীরা কখনোই শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ হতে পারে না।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কে. এম. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত ডীনের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের কোনো শিক্ষকের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ বা নিরাপত্তা চেয়ে কোন আবেদন আমার কাছে আসেনি। এবিষয়ে আমি কোনো কিছুই জানিনা। আমাকে এই বিষয়ে কেউ অবগত করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি এক্সপার্ট কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ইউজিসিতে পাঠাবো। ইউজিসি থেকে অনুমোদন পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করেছে সরকারি ও বেসরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে তাদের যেন সার্টিফিকেট জনিত কোনো সমস্যা না হয় সেবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এসকল সমস্যা সমাধানে যেহেতু সময়ের প্রয়োজন তাই আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়নি।