ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার গায়েবি মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে নাশকতার নামে দায়ের হওয়া সাড়ে ৮শ’ গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা বিএনপি। মামলাগুলি প্রত্যাহার চেয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের দফতরে তালিকা জমা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার গায়েবি মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলো। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা গায়েবি মামলায় নির্যাতন ভোগ করেছেন। যশোর জেলাতেও প্রায় সাড়ে ৮শ’ গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। অবশ্য বিএনপি’র দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সকল গায়েবি মামলাগুলি প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে আসামি হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম জীবিত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়েছিলো পুলিশ। এছাড়া তার ছেলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোরে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ সব মামলায় আসামি হয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হন। আটক হয়ে কারাভোগ করেন অনেকে। মৃত্যুবরণ করেছেন, পঙ্গু জীবন যাপন করছেন অনেকে। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে সব গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।
যশোর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার সকল গায়েবি মামলাগুলি প্রত্যাহারে বিবেচনায় নেওয়ায় তারা জেলার সকল গায়েবি মামলার তালিকা জেলা প্রশাসকের দফতরে জমা দিতে যাচ্ছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়া হবে। প্রতিটি গায়েবি মামলার সার্টিফাইড কপি আদালত থেকে সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকের দফতরে জমা দেওয়া হবে। একেকটি মামলার আসামিদের পক্ষ থেকে যে কেউ সার্টিফাইড সংগ্রহ করে জমা দেবে। এরপর জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে এসব গায়েবি মামলার সার্টিফাইড কপি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, যশোর জেলায় প্রায় সাড়ে ৮শ’ গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে যশোর কোতয়ালি থানায় ২১৮টি, মনিরামপুরে ২৮৮টি, কেশবপুরে ৫৫টি, অভয়নগরে ৮০টি, বাঘারপাড়ায় ৬৫টি, শার্শায় ৬৪টি, ঝিকরগাছায় ৫২টি এবং চৌগাছা থানায় ২০টি পুলিশ গায়েবি মামলা দায়ের করেছিলো বলে তারা জানতে পেরেছেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম রসুল জানান, যশোর কোতয়ালি থানায় তাদের দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১৭৫টি গায়েবি মামলা হয়েছিলো আওয়ামী লীগ সরকার আমলে। তবে অন্য থানাগুলিতে কতগুলি গায়েবি মামলা হয়েছে সেই তথ্য তার কাছে নেই। তারাও একই প্রক্রিয়ায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।