হাতে যেন শুধু পেন্সিল না থাকে

0

মারুফ কামাল খান || মাস্টার সাহেব অংক শেখাচ্ছেন হাবলুকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা হাবলু বলো দেখি সাত থেকে চার গেলে হাতে থাকে কতো?’ হাবলু মাস্টার সাহেবের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো স্যারের হাতে পেন্সিল ছাড়া আর কিছুই নেই। সে অবলীলায় জবাব দিলো, ‘হাতে থাকে পেন্সিল।’ ওই জবাব দেওয়ার জন্য হাবলুর কপালে কতোটা উত্তম-মধ্যম জুটেছিল তা’ ভেবে নেওয়ার স্বাধীনতা পাঠকের থাকুক।

ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত ঢেলে প্রায় ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন হটালো। নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ-অর্থনীতিবিদ-ব্যাংকার ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার দেয়া হয়েছে। এ সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদ প্রায় চার মাস হতে চললো। এখন দেশবাসীর হাতে কত রইলো? হাবলুর মতো এ প্রশ্নের জবাবে আমরা ‘হাতে আছে পেন্সিল’ এর বাইরে খুব জুতসই কোনো জবাব দিতে পারছিনা। কিন্তু আমরা চাই হাতে কেবল পেন্সিল নয়, আরো অনেক বেশি কিছু থাকুক। আমরা সে আশায় বুক বেঁধে আছি।

জিনিসপাতির চরম চড়া দামে আমাদের ত্রাহি দশা। হাসিনা রেজিমে নিত্যপণ্যের দামের ফাটকাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। বাজার ছিল হাসিনার অলিগার্ক ও বাণিজ্য সিন্ডিকেটের জুয়ার টেবিল। ওদের সেই খামখেয়ালি এখনো অবাধে চলছে। রাজধানীতে রোজ নানান দাবি ও প্রতিবাদ জানাতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর রাস্তা বন্ধ করা এবং মারামারি ও সংঘর্ষ সহ্যের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ও কানে কানে অহর্নিশ ঢালছে বিষ, রটাচ্ছে গুজব, নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে বেপরোয়া অপপ্রচার।

অঢেল লুটের টাকায় এবং সীমান্তের বাইরের প্রভুদের মদতে প্রায় প্রতিটি ফ্রন্টে ওরা রাষ্ট্র, সরকার ও দেশপ্রেমিক জনগণের বিরুদ্ধে শুরু করেছে অঘোষিত যুদ্ধ। তাদের লক্ষ্য প্রতিশোধমূলক এক বিদ্রোহ সংঘটিত করা। যানজট ও বিদ্যুৎ সংকট দুঃসহ হয়ে উঠেছে। সার্বিক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের ধৈর্যের ওপর তৈরি করেছে প্রবল চাপ। এই নৈরাজ্যকর, যুদ্ধকালীন ও চক্রান্তঘেরা পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার স্বাভাবিক সময়ের মতন রুটিন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সরকার অনেক ভালো কাজ করছে, ভালো উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু ব্যর্থতার অজগর গিলে খাচ্ছে সব সাফল্য।

মর্নিং শোজ দ্য ডে। এই ইংরেজি প্রবাদকে মান্য করলে পরিস্কার বলে দেওয়া যায় সরকারের বর্তমান টিমের পক্ষে ক্রমেই গভীর হতে থাকা চলমান সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। কাজেই পরিস্কার কথা, নতুন করে ভাবুন এবং সেই ভাবনাকে অতি দ্রুত বাস্তবে প্রয়োগ করুন। পতিত ফ্যাসিবাদের অঘোষিত যুদ্ধ মোকাবিলায় দরকার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটা ওয়ারটাইম গভর্নমেন্ট বা যুদ্ধকালীন সরকার। বিপ্লবী চরিত্রের সরকার। ক্ষিপ্রগতির সরকার। এরজন্য সশস্ত্রবাহিনীকে সরকারে অন্তর্ভূক্ত করুন। অচিরেই জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। তাই কালবিলম্ব না করে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করুন।

রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দক্ষতা খুবই অপরিহার্য। বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে এর প্রয়োজনীয়তা আরো তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা এই সময়ে প্রকটভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে। এই সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। এরজন্য প্রয়োজনীয় রদবদল ও পুনর্গঠনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, তাদের অগ্রসর অংশের সহায়তা নেয়া এবং বিশেষ করে আন্দোলনে বিজয়ী ছাত্রসমাজকে সতর্ক প্রহরায় নিয়োজিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সহিষ্ণুতা ও উদারতাকে দুর্বলতা হিসেবে ধরে নিয়ে পরাজিত শক্তি ঝোপ বুঝে কোপ মারছে। তাদের এই আঘাতের জবাবে প্রত্যাঘাত করার জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। বিভিন্নমুখি সংকটের উৎস মুজিববাদী সংবিধান বাতিল না করলেও আপাততঃ স্থগিত রাখুন। জরুরি সংস্কার কাজ সেরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তাই সরকারে রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিনিধি নিন। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর ছাড়া অন্য প্রধান দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে একটি জাতীয় সরকারের আকার দিন। যুদ্ধটা সবাই মিলে লড়ুন, জিতে যাবেন। সদ্য পরাজিত শক্তি চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করবে। হাতে সময় খুব কম। কাজেই কুইক মার্চ।