ঝিকরগাছায় ইনডিপেনডেন্ট টিভির দু সাংবাদিকের ওপর হামলা

0

ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা॥ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের যশোর জেলা প্রতিনিধি জিয়াউল হক ও ক্যামেরাপার্সন শরিফ খানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ঝিকরগাছা পৌর সদরের কৃষ্ণনগরে। এ সময় ক্যামেরাপার্সন শরিফ খানকে বেদম মারপিট ও ক্যামেরা ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। তারা দু সংবাদকর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ ও ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের যশোর জেলা প্রতিনিধি জিয়াউল হক জানান, পৌর সদরের কৃষ্ণনগরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা (গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার কাশিপুর) মকবুল হোসেন ও তার ছেলে পুলিশের এএসপি ফখরুল ইসলাম ওরফে বিপ্লবের বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভাতা উত্তোলন ও সন্তানদের চাকরি, প্রতিবেশীদের মারপিট, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করে সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ওই বাড়ির সামনে যান। তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ আগে ওই এসএসপির সাথে কথা হয়েছিল। বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে স্থানীয় কয়েকজন যুবক এসেই তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। বেদম মারপিটের ফলে ক্যামেরাপার্সন জখম হন। এ সময় শরিফ হোসেনের কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ডকুমেন্ট নষ্ট করে ও ক্যামেরা ভাংচুর করে সন্ত্রাসীরা। ঠেকাতে গিয়ে নিজেও আহত হন জিয়াউল হক। হামলার ঘটনায় ঝিকরগাছা থানায় মামলা একটি হয়।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মকবুল হোসেন ও তার ছেলে ফখরুল ইসলাম ওরফে বিপ্লবের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ গত ১৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক লোকসমাজে একটি বস্তুনিষ্ঠু সংবাদ প্রকাশ হয়।
এদিকে এই ঘটনায় সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে প্রেস ক্লাব যশোরের নেতৃবৃন্দ। প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান জানান, ‘যে দুজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ঝিকরগাছাতে গেছিলেন। সেখানে দুবৃর্ত্ত চক্র তাদের উপর হামলা করে। একই সাথে ক্যামেরা ভাংচুর ও তাদের আটকে রাখে। আমরা মনে করি, ৫ আগস্টে যে গণঅভ্যুত্থান হলো তার মূল লক্ষ্য ছিলো বাকস্বাধীনতা ও দুনীর্তিমৃক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়া। গত সরকারের সময়ের দাপটশালী কর্মকর্তা এখনো তারা প্রভাবশালী, সেই শক্তিগুলো এখনো সচল।পটপরিবর্তন হলেও পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি পরিবর্তন হয়নি; এটা তার উদাহরণ। আমরা এই ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতৃবৃন্দ। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি আকরামুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রকাশ্যে এভাবে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা খুবই উদ্বেগের। নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
অপর এক বিবৃতিতে জেইউজে সভাপতি মনোতোষ বসু ও সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন বলেন, এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। আগেও স্বাধীন সাংবাদিকতা আমরা করতে পারিনি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বাকস্বাধীনতা ও দুনীর্তিমৃক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়া মূল লক্ষ্য। অথচ দাপটশালীরা এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছে। আমরা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া নিন্দা জানিয়েছে টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সাকিরুল কবির রিটন ও সদস্য সচিব শিকদার খালিদ।