খাজুরা বাজারে সরকারি রাস্তার ওপর দোকান ঘর ও ছাদ নির্মাণ

0

 

বাঘারপাড়া (যশোর) সংবাদদাতা॥ বাঘারপাড়ায় খাজুরা বাজারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ও বন্দবিলা ইউপি চেয়াম্যানের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তা দখলের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে সরকারি ইটের রাস্তার উপর দোকানঘর নির্মাণ করেছেন মিলন লস্কর। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, পথচারী থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দোকানঘর নির্মাণের বিষয় স্থানীয় ভূমি অফিস ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, বেলা ১১টায় খাজুরা মাখনবালা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যায়ের পূর্বপ্রান্তে সরকারি ইটের রাস্তার ওপর লস্কর মার্কেটের ছাদ বাড়িয়ে দিয়ে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। ছাদের কাঠামো ঠেকাতে রাস্তার ওপর রয়েছে লম্বা বাঁশের সারি। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি পাকা দোকানঘর। সেটিও দখল করেছে রাস্তার জায়গা। এতে কোনো ধরনের যানবাহ চলাচল করতে পারছে না। বাজারের টিপিএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত প্রায় ১১০ মিটার রাস্তাটি এখন গলিতে পরিণত হয়েছে। আর যেখানে অবৈধ ওই নির্মাণ কাজ চলছে সেখান থেকে খাজুরা ভূমি অফিসের দুরত্ব প্রায় ১২০ মিটার।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লস্কর মার্কেটের মালিক জহুরপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা মিলন লস্কর ও তার ভাই আলমগীর হোসেন মামুন। তারা দোকানঘর নির্মাণ ও মার্কেটের ছাদ নির্মাণ চলমান রেখেছেন । প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীনের আগে ওই রাস্তাটি তৈরি। সহজ এ পথে প্রতিদিন শতশত মানুষ ও ছোট যানবাহন মূল বাজারে চলাচল করে। তৎকালীন বন্দবিলার চেয়ারম্যান শওকত হোসেন মন্ডল ও কাজী কামরুল ইসলাম রাস্তাটি দুই মেয়াদে প্রকল্পের টাকায় ইটের সলিং করেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। যেটি বাইপাস ও মুক্তিযোদ্ধা সড়ক হিসেবে পরিচিত। এরপর নভেম্বর মাসে রাস্তার ওপর সীমানা প্রাচীর দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেন লস্কর মার্কেটের মালিকরা। ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় স্থানীয়রা। পরে তৎকালীন ইউএনও’র হস্তক্ষেপে রাস্তা দখলমুক্ত হয়। সম্প্রতি প্রভাব খাটিয়ে রাস্তার ওপর দোকানঘর নির্মাণ ও ছাদ ঢালাই দিয়েছেন লস্কর মার্কেটের মালিকরা। জনগণের স্বার্থে এই ছাদ ভেঙে ফেলার দাবি স্থানীয়দের।
তবে অভিযুক্ত মার্কেট মালিক মিলন লস্কর জানান ওই রাস্তার জায়গা তাদের। যখন ইটেং সলিং দিয়ে রাস্তা স্থায়ীকরণ করা হয় তখন কেনো বাধা দেননি জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর তাদের ওপর বাধা ছিল। এখন সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেজন্য দোকানঘর নির্মাণ ও ছাদ দিচ্ছেন তারা।
শাহীন হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তা দেখিয়ে লস্কাররা তার কাছে ৪ শতক জমি বিক্রি করে। আজ যদি সেই রাস্তাই না থাকে তাহলে আমার জমির আর কোনো মূল্য থাকলো না। শুধু তিনিই নয়, তার মতো রাস্তার দু’পাশের দোকান মালিক ও ১২ জন ব্যবসায়ীর কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।
বন্দবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘ দিনের। জনস্বার্থে ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে রাস্তাটি তৃতীয়বারের মতো ফ্লাট সলিং করা হয়। রাস্তার ওপর ছাদ দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও স্যারের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারপরও তারা ছাদ দিয়েছেন। এটা কাম্য নয়।
জানতে চাইলে খাজুরা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা বিএম শাহীন রেজা সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার সারাদিন অফিসের কাজে বাঘারপাড়া সদরে ছিলাম। এ বিষয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সবসময় ইউএনও-এসিল্যা- স্যারকে জানাচ্ছি। তারপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা ছাদ দিল। ওখানে বাধা দিতে গেলে আমি মার খেতাম।
বাঘারপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইউসুফ মিয়া জানান, সোমবার ছাদ দেওয়ার খবরটি তার জানা ছিলো না। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।