খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছি

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু ॥  গাছিরা শীতের আগমনী বার্তায় রস সংগ্রহের উদ্দেশে খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মৌসুমী ও পেশাদার গাছিরা এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেজুর গাছ প্রস্তুত করে যাচ্ছেন।
আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই নলেন গুড়ের স্বাদ পাবে মানুষ। তবে খেজুর গাছ তোলা, রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে গুড় তৈরি পর্যন্ত যে শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়, সেই অনুযায়ী গুড় বা পাটালির দাম পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ গাছিদের।
‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’ চিরন্তন এই বানী এক সময় হারিয়ে যেতে বসে। নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধন এর অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে খেজুর গাছ সংরক্ষণে যেমন গাছিরা সজাগ, তেমনি সাধারণ মানুষও সোচ্চার হয়েছেন। সেই সাথে গত দুই বছরে চৌগাছাতে খেজুর গুড়ের মেলা হওয়ায় এখন খেজুর গাছ রক্ষা এবং অধিক পরিমাণে গাছ রোপণে হারানো সেই দিন যেন ধীরে ধীরে ফিরে আসতে শুরু করেছে মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি দুই দফার বৃষ্টিতে গাছ তোলা কিছুটা দেরি হয়েছে, এই শূন্যতা গাছিরা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
শনিবার সকালে উপজেলার স্বরুপদাহ, বেলেমাঠ, বাঘারদাড়িসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,সড়কের পাশে এমনকি পতিত জমিতে জন্ম নেওয়া খেজুর গাছ তুলতে ব্যস্ত গাছিরা। দিনে তাপমাত্রা এখনও বেশি হলেও ভোরে দেখা মিলছে ঘন কুয়াশা আর মৃদু শীত। কুয়াশা আর মৃদু শীতই জানান দিচ্ছে অচিরেই জেকে বসবে ঠা-া আর দেখা মিলবে রস গুড় ও পাটালির।
স্বরুপদাহ গ্রামের মাঠে খেজুর গাছ তুলতে ব্যস্ত গাছি লিয়াকত হোসেন। এসময় কথা হয় তার সাথে। গাছি লিয়াকত আলী বলেন, আমার পিতা শহিদুল ইসলাম ছিলেন একজন পেশাদার গাছি। তিনি এখন আর গাছ কাটতে পারেন না। আমি ও আমার ভাই শওকত আলী প্রতি বছর তিন থেকে চার শ খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করি। এরমধ্যে কিছু গাছ আমাদের নিজের, বাকি গাছ আমরা রস বা গুড় ভাগা নিয়ে নিয়ে থাকি। এ বছরও দুই ভাই মিলে প্রায় চার শ খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করবো বলে মনস্থির করেছি। আমাদের তৈরি গুড়ের কদরই আলাদা। কেননা আমরা গুড়ে কখনও কোনো ভেজাল দিই না। সে কারণে গুড় তৈরি থেকে শুরু করে মৌসুম শেষ পর্যন্ত বাড়িতে কোনো গুড় জমা করতে পারি না।
বেলেমাঠ গ্রামের গাছি শাহ আলম, বিলাত আলী, শহিদুল ইসলাম, বাঘারদাড়ি গ্রামের ছাপানুর রহমানসহ একাধিক গাছি বলেন, রস সংগহ আর গুড় তৈরিতে যে শ্রম ও অর্থ ব্যয় সেই অনুযায়ী আমরা গাছিরা গুড়ের দাম পাই না। আমাদের বিষয়টি সকলকে গুরুত্ব দিতে হবে।
গাছিরা বলেন, এমন এক সময় ছিলো ইটভাটার মালিকরা নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধন করেছে। অভাবকে পূঁজি করে তারা গাছ মালিককে খেজুর গাছ কাটাতে বাধ্য করেছে। এখনও কিছু কিছু ইটভাটা আছে তারা নিয়মিত খেজুর গাছ ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে খেজুর গাছ তার হারিয়ে যাওয়া দিন আবার ফিরে পাবে, মিলবে কাক্সিক্ষত রস ও গুড়।