বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ রাকিবের ঘর এখনো পরিপাটি করে গোছানো

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ এখনও ফ্রিজে জমানো রয়েছে দুধ, গুড়, নারকেল —-। নিস্তব্ধ ঘরে প্রতিটি জিনিস পরিপাটি সাজানো। টানটান করা বিছানার এক পাশে বালিশ। পড়ার টেবিলে সাজানো বই। ড্রয়িং রুমে রয়েছে প্রিয় মোটরসাইকেল। তার পাশেই ওয়াশিং মেশিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হোসেন (২৯)। রাকিব চাকরির কারণে ঢাকায় থাকতেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে তার ঘরটা সবসময় এমনই সাজানো থাকতো তার অপেক্ষায়।
ঝিনাইদহ পৌরসভার সার্কিট হাউজ রোডের মহিষাকুন্ডু এলাকার অধিবাসী বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) আবু বকর সিদ্দিক (৬১) ও হাফিজা খাতুন (৫৮) দম্পতির আদরের ধন রাকিবুল হোসেন। তিনি ঢাকার বনানী সুপার জুট মিলে চাকরি করতেন। ঢাকার মিরপুরে ১১ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাকিব ছোট। বড় ভাই ইকবাল হোসেন (৩৭) সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে ঝিনাইদহ শাখায় কর্মরত।
শহীদ রাকিবের পিতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আন্দোলনের সময় আমরা রাকিবকে ফোন করলে সে লোকজনের ভিড় থেকে সরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলত। সে যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তা আমাদের বুঝতে দিতে চাইতো না। এসব কথা রাকিবুলের সহকর্মীরা পরে আমাদের জানিয়েছে।
রাকিবের মা হাফিজা খাতুন বলেন, ১৮ জুলাই ঢাকায় যখন আন্দোলনে হামলা শুরু হয়, তখন থেকেই আমরা ভয়ে ছিলাম। শুধু ভাবতাম আমার রাকিব অফিসে যাবে কীভাবে? ১৯ জুলাই শুক্রবার রাকিবকে ফোন করে বললাম, আব্বু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরা যাবে না? প্রতি উত্তরে সে বলেছিল, না মা, ফেরা যাবে না। সে ঠিকই ফিরেছে। তবে লাশ হয়ে। এ কথা বলে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিজেকে সামলে আবার বলতে শুরু করেন, ১৯ জুলাই মিরপুর ১১- তে মেট্রোরেল লাইনের নিচে আন্দোলনকারীদের মাঝে আমার ছেলে পানি বিতরণ করছিল। শিক্ষার্থীদের মাঝে সে যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ নিরাপদেই ছিল। যখনই সে পানি বিতরণ শেষে শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায়, তখনই তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। আমার ছেলের সাথে থাকা সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ওপর থেকে গুলি এসে তার গলায় ঢুকে যায়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আমার ছেলেটা মারা যায়।
শহীদ রাকিবের পিতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার ছেলের বন্ধু পিয়াস জানিয়েছে, ওপর থেকে নিখুঁত টার্গেটে আমার ছেলেকে গুলি করা হয়। পিয়াস প্রথম বাড়িতে খবর দেন। পিয়াসই রাকিবের অফিসের সহকর্মী সালমান ও ফয়সালকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ রাকিবকে দাফন করা হয়।