অতিবৃষ্টিতে যশোরে ৩৫ বিঘা জমির গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেত নষ্ট

0

আকরামুজ্জামান ॥ গত মাসের দুই দফা অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতে এ বছর যশোরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে গত মাসে জেলায় প্রায় ৩৫ বিঘা জমির শতভাগ টমেটো গাছ মরে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের চিহ্নিত করে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সবজি জোন হিসেবে পরিচিত যশোরে বছরজুড়েই নানা জাতের সবজি চাষ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি এ জেলার চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে বেশ সাড়া ফেলে আসছেন। ব্যয়বহুল খরচে টমেটো চাষ করে ভালো দামে বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের টমেটোর চারা, সার, কীটনাশক ও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে জেলায় এক হাজারেরও বেশি কৃষককে টমেটো চাষে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হয়।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাছান আলী বলেন, চলতি মৌসুমে যশোর সদর উপজেলার কৃষকরা সাধ্যমত টমেটো চাষ করে। ফলনও দেখা দেয় ভালো। কিন্তু গত মাসে দুই দফার অতিমাত্রার বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ ক্ষেতের টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে কিছু চাষি পলিথিন দিয়ে ক্ষেত রক্ষা করলেও সেখানে ফলন কমে গেছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নতুন করে আবার টমেটো চারা লাগান্ োশুরু করেছেন। আশা করা যায় তারা পরবর্তিতে ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৩৫ হেক্টর জমিতে এবছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে শুধুমাত্র বাঘারপাড়া উপজেলাতেই রয়েছে ২৫ হেক্টর। ৩৫ হেক্টর এ টমেটো আবাদের মধ্যে ভারী বৃষ্টিতে ৫ হেক্টর জমির টমেটো ক্ষেত পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলার সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের টমেটো চাষি আরিফ বিল্লাহ বলেন, গত ৫/৭ বছর ধরে তারা টমেটো চাষ করে আসছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এর আগে আর কখনও পড়েননি । তিনি বলেন, উঁচু জমিতে টমেটো চাষ করলেও গত মাসে ভারী বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ে। এতেই অধিকাংশ গাছ মরে সাফ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে চারা রোপণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে তিনি জানান।
একই এলাকার চাষি ফসিয়ার রহমান বলেন, এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এ টমেটো চাষে খরচ হয় এক লাখেরও বেশি টাকা। এখান থেকে টমেটো বিক্রি করে প্রায় লাখ টাকা লাভবান সম্ভব। কিন্তু এবছর লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচ রক্ষা করাও সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে বৃষ্টি হলেও টমেটো ক্ষেতে পানি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। কিন্তু এবছর অতিমাত্রা বৃষ্টিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় পুরোটায় লস হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এবছর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শুধু টমেটো নয়, জেলার অন্যান্য জাতের সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। তবে এরমধ্যে ৩৫ বিঘা জমির গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। চাষিদের সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে জেলার ১৫ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।