বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে ওসি অপূর্ব হাসানের নামে আদালতে মামলা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে যুবলীগ কর্মী সোহাগ হত্যা মামলার আসামি ও জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক আলোচিত সন্ত্রাসী শেখ জাহিদ হোসেন ওরফে টাক মিলনের ক্যাডার তাইজেলকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা হয়েছে। নিহতের ভাই তানভীর রহমান তন্ময় (২৪) মামলাটি করেছেন। মামলায় কোতয়ালি থানা পুলিশের তৎকালীন ওসি অপূর্ব হাসান ও নিহত যুবলীগ কর্মী সোহাগের ভাই ফেরদাউস হোসেন সোমরাজসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ বিষয়ে থানা কোনো মামলা হয়েছে কিনা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে দাখিলের আদেশ দিয়েছে।
আসামিরা হলেন- কোতয়ালি থানার সাবেক ওসি অপূর্ব হাসান, এসআই হাসান, কনস্টেবল রোকনুজ্জামান ও আবু হাসান এবং শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ঠিকাদার ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ।
সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের খোলাডাঙ্গার হাফিজুর রহমানের ছেলে তানভীর রহমান তন্ময় মামলায় দাবি করেছেন, তার বড়ভাই তাইজেলের সাথে আসামি সোমরাজের পূর্ব শত্রুতা ছিলো। এরই জের ধরে সোমরাজের কুপরামর্শে আসামি কোতয়ালি থানার সাবেক ওসি অপূর্ব হাসান, এসআই হাসান, কনস্টেবল আবু হাসান ও রোকনুজ্জামান ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর রাত ১টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামস্থ শ্বশুরবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে যশোর কোতয়ালি থানায় আসামি ওসি অপূর্ব হাসানের রুমে যান তানভীর রহমান তন্ময়। সেখানে তিনি সকল আসামিকে দেখতে পান। এছাড়া তার ভাই তাইজেলকে থানার হাজতখানায় দেখতে পান তিনি। তখন আসামি ওসি অপূর্ব হাসান ও এসআই হাসান তাকে বলেন, তোর ভাইকে বাঁচাতে ৫ লাখ টাকা নিয়ে দেখা করবি। ভাইকে বাঁচাতে তাদের টাকা দিতে রাজী হন তিনি এবং বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু সকালে তানভীর রহমান তন্ময় খবর পান, পুরাতন কসবা বেগম মিলের পাশে তার ভাই তাইজেলের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ এসে লাশটি নিয়ে যায় এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। তবে আসামি ওসি অপূর্ব হাসানের হুমকির কারণে সেই সময় মামলা করতে সাহস পাননি তানভীর রহমান তন্ময়।
এদিকে যুবলীগ কর্মী সোহাগ হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড়ভাই ফেরদাউস হোসেন সোমরাজকে সন্ত্রাসী তাইজেলকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে আদালতে করা মামলায় আসামি করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যুবলীগ কর্মী সোহাগ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রভাবশালী আসামিদের পরামর্শে ফেরদাউস হোসেন সোমরাজকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ২টি হত্যা মামলায় ফেরদাউস হোসেন সোমরাজকে আসামি করিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রকৃত ঘটনাটি জানতে পারায় চার্জশিট থেকে ফেরদাউস হোসেন সোমরাজকে অব্যহতি দিয়েছিলেন।
ঠিকাদার ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ জানান, সোহাগ হত্যা মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য আসামি শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, ইয়াছিন মোহাম্মদ কাজল ও সাগর তাকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু তিনি মামলা প্রত্যাহার না করায় গত ২১ সেপ্টেম্বর সকালে উল্লিখিত আসামিরা কাজীপাড়ায় তার বাড়ির সামনে গিয়ে তাকে ফের হুমকি দেন। ফেরদাউস হোসেন সোমরাজকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, তানভীর রহমান তন্ময়কে দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে কাজীপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে যুবলীগ কর্মী সোহাগকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ঘটনায় পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী তাইজেলসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন ফেরদাউস হোসেন সোমরাজ।