দখল আর নানা নির্যাতনে সংকুচিত টেকা, পানিবন্দী গ্রামবাসী

0

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর)॥ যশোরের অভয়নগর-মণিরামপুর দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত টেকা নদী। এই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার ও বসতবাড়ি। ফলে দিনদিন নদী শঙ্কুচিত হওয়ায় নদী তার স্বাভাবিক নাব্য হারিয়ে ফেলছে। তাছাড়া এ নদীতে বর্ষা মৌসুমে এক শ্রেণির অসাধু মাছ শিকারী নেটপাটা ব্যবহার করে। স্রোতের গতিধারা ব্যাহত করায় প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রান্তিক চাষিরা তাদের জমিতে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হন। এছাড়া হাজার হাজার মৎস্যচাষির মৎস্য খামার ভেসে যায়। এ সব দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় দিনদিন দখলদারিত্ব বেড়ে যাওয়ায় কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে এ নদী।
ভবদহের ২৭ বিলের পানি এ নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শ্রীহরি ও মুক্তেশ^রি নদী দিয়ে বের হয়। নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ার সকল প্রতিবন্ধকতা ও দখল উচ্ছেদে অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে নদী খননের জন্যে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ লুটপাট হয়। নদী খননের মাটি নদীর পাড়েই ফেলে রাখা হয়। বর্ষার মৌসুমে ওই খননকৃত মাটি আবার নদীতে গিয়ে পড়ে নদী ভরাট হয়। ফলে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয় না। এ ছাড়া প্রায় ৩শ ফুট প্রস্থের নদীটির উভয় তীরে ২শ ৭০ ফুট মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে।
৯০ দশকে নির্মিত হয় টেকা নদীতে ব্রিজ। ব্রিজটি দুর্বল হয়ে পড়ায় ২০২০ সালে পুরনো ব্রিজটি ভেঙে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দুই উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্যে নদী ভরাট করে অস্থায়ীভাবে মির্মিত হয় কাঠের সেতু। দীর্ঘদিন নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এবং কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।
বুধবার সকালে সরোজমিনে দেখা যায়, বয়ারঘাট খাল থেকে শুরু করে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার। এই তিন কিলোমিটার এলাকায় নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠন, মৎস্য খামার ও বসতবাড়ি। ৩০ ফুটের কাঠের সেতু জুড়ে শেওলা আর কাঠের বড়বড় গুঁড়ি পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এ কারণে ভবদহের ২৭ বিলের পানি টেকা নদী দিয়ে বের হতে না পেরে অভয়নগরে ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিববন্দি রয়েছেন।
গত ১০ অক্টোবর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আমিরুল হক ও যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম এলাকাটি পরিদর্শন করেন। তারা পানি প্রবাহে বিঘœসৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধকতা দূর করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো অভিযান পরিচালিত হয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।