গভীর রাতে যশোরের রেল বাজারে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম

0

স্টাফ রিপোর্টার || সোমবার গভীর রাতে যশোর রেলবাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হোটেল মালিককে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। সংকটাপন্ন অবস্থায় গোলাম মাওলা বুলু নামের ওই ব্যবসায়ীকে ঢাকায় স্থানান্তর করেছেন চিকিৎসকরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে রেলবাজার ব্যবসায়ী সমিতি মঙ্গলবার আধাবেলা ধর্মঘট পালন, দুপুরে শহরের বিক্ষোভ প্রদর্শন, প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং কোতয়ালি থানা ঘেরাও করেন।

গোলাম মাওলা বুলুর ছোট ভাই সোহেল রানা জানান, রেলবাজারে ব্যবসায়ী সমিতি নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে। ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদকের একটি পদ দেওয়া হয়েছে তার ভাই গোলাম মাওলা বুলুকে। কমিটি গঠনের পর ব্যবসায়ীরা রেলবাজারের পূর্ব পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।  এ কারণে ইজারাদারের আদায়কারী অভি এবং মিজান তার ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এর জের ধরে গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে অভি এবং মিজান একটি মোটরসাইকেলে করে এসে আচমকা তাদের হোটেলে ঢুকে তার ভাই গোলাম মাওলা বুলুকে কুপিয়ে জখম করেন। তখন হোটেলের লোকজন ছাড়াও আশেপাশের লোকজন ধাওয়া করলে তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। ওই মোটরসাইকেলের মালিক অভি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে মোটরসাইকেলটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি দাবি করেন, হামলাকারীরা দিনে খাজনা আদায় করলেও রাতের বেলায় ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। তিনি জানান, তার ভাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় তারা থানায় মামলা করবেন।

নবগঠিত রেলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় লোকজন মোটরসাইকেল আসা সন্ত্রাসীদের চিনতে পেরেছেন। এরা হচ্ছে,  অভি, মিজান এবং আব্দুর রহমান বাবু।

স্থানীয় একটি সূত্রে আরও জানা গেছে, রেল বাজারটির সাথে জড়িয়ে আছে সুদ ব্যবসা ও আবাসিক হোটেলের দেহ ব্যবসা ও মাদক কারবার। অবৈধ এসব কারবারীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের সাথে ব্যবসায়ীদের দ্ব›দ্ব লেগেই থাকে। সোমবার রাতে হামলার ঘটনায় জড়িত তিন জন ছাড়াও এ সন্ত্রাসীদের দলে রয়েছে রবিউল, আকাশ, বড় ফয়সাল, ছোট ফয়সাল, আবিল, মেহেদী ও ট্যাটু সুমনের নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন। মাদকাসক্ত এ সন্ত্রাসীরা ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত রয়েছে। এছাড়া বাজার এলাকার টোং ঘরগুলো থেকে চাঁদা তোলে তারা। এর নেতৃত্বে রয়েছে ম্যানসেল। তবে গত ৫ আগস্টের পর বাড়িতে হামলার কারণে যুবলীগ নেতা ম্যানসেল এলাকাছাড়া। এখন তার সহযোগীরা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের আটকের দাবিতে রেলবাজারে আধাবেলা ধর্মঘট পালন করেন ব্যবসায়ীরা। পরে দুপুরে রেলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রুহল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রেসক্লাবের সামনে এসে মানবন্ধন পালন করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন সমিতির যুগ্ম  সম্পাদক মো. জাকির হোসেন। এরপর ব্যবসায়ীরা ফের মিছিল সহকারে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আটকের দাবিতে কোতয়ালি থানা ঘেরাও করেন।

সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. জাকির হোসেন জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান সন্ত্রাসীদের আটকের আশ্বাস এবং খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিতে বলেন। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে ফিরে আসেন এবং ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।

কোতয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই তারেক মোহাম্মদ নাহিয়ান বলেন, স্যার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান) বেশি খাজনা নিলে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিতে।

এদিকে রেল বাজারের ইজারাদার মীর সাদি বলেছেন, অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা বাজারের তার ইজারা নেওয়া অংশের কোন খাজনা আদায়কারী নয়।

কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, ব্যবসায়ীরা হামলার সাথে জড়িত হিসেবে অভি ও মিজানসহ ৩ জনের নাম প্রকাশ করেছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।