কেশবপুরে বানভাসি মানুষের মুখে হাসি বিএনপির ত্রাণ পেয়ে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেশবপুর পৌর সদরের প্রবেশমুখ মধ্যকুল গ্রামে বানভাসি মানুষের সারি সারি টোঙ ঘর দেখে থামে বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক। ত্রাণের ট্রাক দেখামাত্রই ক্ষুধার্ত মুখগুলো হাসিতে ভরে যায়। যেন বহুদিন পরে আজ তারা খাবার পাবে।  শনিবার দুপুরে যশোর-চুকনগর সড়কের পাশের টোঙ ঘরে আশ্রয় নেওয়া সকল দুর্গত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয় যশোর জেলা বিএনপি। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে মলিন মুখেও হাসি ফুটে ওঠে মধ্যকুল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রেজাউল মোড়লের। তিনি বলেন, প্রায় এক মাস ধরে বাড়ি-ঘরে পানি। এখন রাস্তার পাশে ঘর করে থাকতি হয়। ঘরে কোন খাবার নেই। বিএনপির লোকেরা আজ এক বস্তা খাবার দেছে। কয়েক দিন খাওয়া হবে। এভাবে কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
বিএনপি নেতারা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এর আগে সকালে ট্রাক ভর্তি ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে জেলা কার্যালয় থেকে রওনা দেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
মধ্যকুলে বানভাসি মানুষের ত্রাণ প্রদানের পর জেলা বিএনপির ত্রাণ ট্রাক পৌঁছায় কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানেও বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য দীর্ঘ লাইনে আগেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিদ্যালয় ফাঁকা মাঠে কিংবা শ্রেণি কক্ষে বাড়ি-ঘর ছাড়া এই মানুষের ঠাঁই হয়েছে। সেখানে ত্রাণ নিতে আসা বালিয়াডাঙ্গার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব শরিফা খাতুন বলেন, ‘বাড়িÑঘর পানিতে তলায় গেছে। স্কুল মাঠে থাকতিছি, ঘরে কিছু নেই। ত্রাণের কথা শুনে লাইনি দাঁড়াইছি। এক বস্তা ত্রাণ দেছে কয়দিন খাতি পারবানে।’
এরপর জেলা বিএনপির ত্রাণাবাহী ট্রাক চলে যায় কেশবপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। সেখানেও ছিল ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মানুষের দীর্ঘ লাইন। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বানভাসি ক্ষুধার্ত মানুষ একে একে আসেন, বস্তা ভর্তি ত্রাণের প্যাকেট আর মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে টোং ঘরে ফেরেন। সেখানে কথা হয় ভৌগতি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল গফুরের সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস পানিতে তলায় গেছে। খায়ি না খায়ি টোংয়ের মধ্যি দিন কাটাচ্ছি। কেউ এক সের চাল দিইনি। সকালে শুনলাম বিএনপি নিতারা (নেতারা) আমাইগির জন্নি ত্রাণ আনতিছে। কথাটা শুনার পর খুব ভালো লাগিছে। এখন বস্তা ভর্তি চাল, ডাল তেল এসব পাইয়ে খুব ভালো লাগদিছে। কয়ডা দিন পেট ভরি খাতি পারবানে।’
সর্বশেষে জেলা বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক যায়, যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের কেশবপুর ডিগ্রী কলেজের সামনে সড়কে। সেখানেও ছিল বানভাসি মানুষের ত্রাণের অপেক্ষা। ত্রাণ নিয়ে ফেরার পথে কথা হয় ৫৫ বছর বয়সী আলতাপোল গ্রামের লক্ষ্মী রানীর সাথে। বস্তা ভর্তি ত্রাণের প্যাকেট পেয়ে ক্ষুধার্ত লক্ষ্মী রানীর মুখের হাসি যেন থামছেই না। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ঠিক মতো খাতি পারিনি। কেউ কিছু(ত্রাণ) দেয়নি। ত্রাণের কথা শুনে আইলাম। যা চাইলাম, তার চায়ি বেশি দেছে। অসুস্থ স্বামী, সন্তান নিয়ে কইদিন খাতি পারবানে।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যশোরের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে দলের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। সর্বোপরি অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সার্বিক ব্যবস্থপনায় আমরা কেশবপুরের বানভাসি মানুষের ত্রাণ দিতে পেরেছি। যশোরের অন্যান্য অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। যতদিন যশোরের বন্যাদুর্গত মানুষের কষ্ট লাঘব না হবে ততদিন আমাদের এই কার্যক্রম চলবে। কারণ আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, তাদের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। জনগণের পাশেই দাঁড়ানোই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
ত্রাণ সামগ্রী প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক, সিনিয়র সহ-সভাপতি কুতুব উদ্দিন বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর কবির, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ।