যশোরের ঘোপে ১৬ বছর দৌরাত্ম্য চালিয়েছে আ.লীগ ক্যাডাররা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভিআইপি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত যশোর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোপে আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে একই দলীয় ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য চরম পর্যায়ে ছিলো। সন্ত্রাসী, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত দলীয় এসব ক্যাডারকে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ২ নেতা লালন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ঘোপের বাড়িতে যে কয়েকদফা হামলা ঘটনা ঘটে এর সাথে এসব ক্যাডার জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ। অথচ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওইসব সন্ত্রাসীকে আটকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শাসন আমলের প্রথম দিকে ঘোপ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন যুবলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শিপন ওরফে টাক শিপন। ঘোপ বউ বাজার এলাকার বাসিন্দা টাক শিপন পরবর্তীতে দলীয় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। তবে টাক শিপন নিহত হওয়ার পর ঘোপ এলাকায় আওয়ামী লীগের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীর উত্থান ঘটে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন- ঘোপ সেন্ট্রাল রোড কবরস্থান পাড়ার জামাল মোল্লার ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শফিকুল ইসলাম সোহাগ। রীতিমতো একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে ওই এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদকের রমরমা চালিয়ে এসেছেন সোহাগ। কবরস্থান পাড়ায় সিঅ্যান্ডবি’র জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিজ অফিস ছাড়াও একজন ভগ্নিপতির দোকান তৈরি করে দেন তিনি। অফিসের আড়ালে সেখানে মাদকের ব্যবসা এবং ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগি হতো। কয়েক বছর আগে ঘোপে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মকসীমুল বারী অপুর বাড়ির পাশে এক ব্যক্তি খুন হয়েছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ সোহাগকে আটক করেছিলো। সূত্র জানায়, ঘোপ হাসপাতাল মোড় এলাকার সিএনজি-টেম্পু স্ট্যান্ড, উপশহরস্থ খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইজিবাইক স্ট্যান্ড এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করতেন সোহাগ ও তার সহযোগীরা।
যুবলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী সোহাগকে কারা শেল্টার দিতেন ? এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের শেল্টারে কখনো, আবার কখনো সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের শেল্টার পেয়েছেন সোহাগ। তবে নিজ সুবিধার্থে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চালকদারের শেল্টারে থেকেছেন বেশি সময়। আওয়ামী লীগের দলীয় মিছিল-মিটিঙে সোহাগকে তার দলবল নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
সন্ত্রাসী সোহাগের সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন- রাজু, সলেমান, সানোয়ার, নুর আলম, রানা, ছোট রবিউল, শফিকুল, নুরুন্নবী, টিটো, রতন, আমিনুর, আলিফ, নেহাল, বাঁধন, কালা নাজমুল, চোর রকি, চোর মুন্না, প্রোটেন মুন্না প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানান, ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে আওয়ামী লীগ আশ্রিত আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। যার নেতৃত্ব দিতেন আজাদ নামে এক সন্ত্রাসী। এই গ্রুপে খচ্চর সেলিম, জুয়েল, রাসেল, মেঠো কামাল, সিজান, রাব্বি টিটোসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী রয়েছে। এরাও আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে নানা অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো। বিশেষ করে ঘোপ সেন্ট্রাল রোড কবরস্থান পাড়ায় কয়েক বছর আগে প্রতিপক্ষ যুবলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী সোহাগের অফিসে বোমা হামলা চালিয়েছিলো। সূত্র জানায়, উল্লিখিতরা ছাড়াও ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মুনসুরের ছেলে তিতাস, হাকিমের ছেলে তরিকুল, মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে বাপ্পী, আনিছের ছেলে হানিফ, মৃত পিকুলের ছেলে সৈকত, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের আজাদ মিয়ার ছেলে সাঈদ ওরফে কালো সাঈদ, ঘোপ জেল রোড বুড়ির বাগান এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে চশমা শাকিল, ঘোপ জেল রোডের গোলাম তবলাওয়ালার ছেলে আশিক, মৃত লতিফের ছেলে অনিক, আলমগীরের ছেলে রেজওয়ান, জাহাঙ্গীরের ছেলে রাজন ও আক্তারের ছেলে সুজন বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে এসেছেন। শেখ হাসিনার সকারের পতনের কিছুদিন আগে সন্ত্রাসী সুজন কাঠেরপুলের একটি অংশ দখল করে নিয়েছিলেন। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলার ঘটনার সাথেও জড়িত ছিলো সন্ত্রাসী সুজন এবং তার অন্য সহযোগীরা।
ঘোপে জেলা যুবলীগ নেতা ডিম শফি ও তার ভাই কালুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন সাধারণ মানুষ। চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব ছিলো তাদের দুই ভাইয়ের অন্যতম কর্মকান্ড। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও অপসরারিত পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশের অনুসারী ছিলেন ডিম শফি ও কালু।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দানকারী বোরহানও নানাভাবে ঘোপের শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন। তিনি দলীয় মিছিলে যেতে বাধ্য করতেন এলাকার সাধারণ ছাত্রদের। না গেলে তাদের উপর নির্যাতন চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।