আরও সাড়ে ৬৬ লাখ টাকার জমি ও বাড়ির হদিস পেল দুদক দুর্নীতির সম্পদে সন্তানদেরও জড়িয়েছেন টিএসআই রফিক, ক্রোকের আবেদন

0

স্টাফ রিপোর্টার ।। যশোর সদর পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক টিএসআই বর্তমানে ফরিদপুরে ট্রাফিক ইনসপেক্টর পদে কর্মরত বহুল আলোচিত রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিকের স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিন এবং তাদের ৩ সন্তান রাসেল আহমেদ, মরিয়াম ইসলাম রীমি ও ইস্তিয়াক আহমেদ রোহানের নামে ক্রয় করা আরও সাড়ে ৬৬ লাখ টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৫টি দলিলের এই সম্পত্তি ক্রোকের জন্য গত রোববার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন জানিয়েছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়া যশোর শহরের বেজপাড়া মেইন রোডে বাসিন্দা ভায়রা সরদার তমাল আহমেদ এবং শ্যালিকা মাহমুদা খাতুনের কাছে সাবেক টিএসআই রফিক বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্ছিত রেখেছেন বলে জানা গেছে। বেজপাড়া মেইন রোডে সরদার তমাল আহমেদ ও মাহমুদা খাতুন দম্পতি যে ফ্ল্যাটের মালিক সেই ভবন মালিককে সাবেক টিএসআই ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে অনুসন্ধানে পাওয়া যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক টিএসআই রফিক ও তার স্ত্রী ঝর্ণা ইয়াসমিনের বিপুল সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে ক্রোক করে দুদক। এরপর অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই দম্পত্তির বিরুদ্ধে আলাদা মামলা দায়ের করেন।

দুদকের পিপি অ্যাড. মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আসামি ঝর্ণা ইয়াসমিনের  মামলা তদন্তকালে তার নিজ নামে ৪টি দলিলে এবং ৩ সন্তান রাসেল আহমেদ, মরিয়াম ইসলাম রীমি ও ইস্তিয়াক আহমেদ রোহানের নামে যশোরে ক্রয় ১টি দলিলে মোট ৬৬ লাখ ৫১ হাজার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।

এর মধ্যে ঝর্ণা ইয়াসমিনের নামে বারান্দী মৌজায় ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ক্রয় করা শূন্য ৫ দশমিক ৬৯৫ শতক, শূন্য দশমিক ৫১৯ শতক, ২০১৬ সালের ৮ জুন ক্রয় করা ১ দশমিক শূন্য ২৫ শতক, পাগলাদাহ মৌজায় ২০২৪ সালের ২১ মার্চ ক্রয় করা ৪১ দশমিক ৫০ শতক জমি এবং ৩ সন্তান রাসেল আহমেদ, মরিয়াম ইসলাম রীমি ও ইস্তিয়াক আহমেদ রোহানের নামে পাগলাদাহ মৌজায় ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি ক্রয় করা ২৩ শতক জমি রয়েছে। এই সম্পত্তি যাতে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পারে সেই জন্য ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঝর্না ইয়াসমিনের নামে দায়ের করা দুদকের মামলাটি উচ্চ আদালতে স্থানান্তর করিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক টিএসআই রফিক। এ জন্য গতকাল সোমবার তাদের একজন প্রতিনিধি যশোরে আদালতে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেছে, বেজপাড়া মেইন রোডে বসবাসকারী সাবেক টিএসআই রফিকের ভায়রা সরদার তমাল আহমেদ এবং শ্যালিকা মাহমুদা খাতুনের কাছে অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল অঙ্কের টাকা গাচ্ছিত রেখেছেন। বেজপাড়া মেইন রোডে ৪ তলা একটি ভবনের ৩ তলা ফ্ল্যাটের মালিক ওই দম্পতি। সাবেক টিএসআই রফিক নিজের টাকা দিয়ে তাদের ওই ফ্ল্যাট ক্রয় করে দিয়েছেন।

ভবন মালিক আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রায় ৬ বছর আগে তিনি ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন। তখন বাজার মূল্য ছিলো প্রায় ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু সাবেক টিএসআই রফিক তাকে এক প্রকার জিম্মি করে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে সরদার তমাল আহমেদ জানান, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। সেখানে তিনি ভালো বেতনে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং নিজ উপার্জিত ৩০ লাখের কিছু বেশি টাকা দিয়ে ওই ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এছাড়া তাদের কাছে ভায়রা রফিকের বিপুল টাকা গচ্ছিত রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়।