অভয়নগরে পানিবন্দি ২৮ গ্রামের মানুষ

0

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর)॥ গত দুদিনের টানা বর্ষণে যশোরের অভয়নগরের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমন ধান ও মাছের ঘেরসহ তলিয়ে গেছে অর্ধশত হেক্টর জমির সবজি ও ফসলের ক্ষেত। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। এছাড়াও ফের পানিবন্দি হয়েছে ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার। পানিবন্দি ২৮ গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করলেও মেলেনি এখনও কোনো সরকারি সহায়তা। কম দামে বিক্রি হচ্ছে গবাদিপশু।
স্থানীয়রা জানান, পানি নিষ্কাশনের জন্যে ১৯৬৮ সালে উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের কালিশাকুল গ্রামের ভবদহ নামক স্থানে নির্মিত হয়েছিল ২১, ৯, ৬ ও ২ ভেন্টের স্লুইস গেট। পরবর্তীতে টেকা, পশুর ও শ্রীহরি নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় ১৯৮৫ সাল থেকে স্থায়ীভাবে পানিবন্দি হন এ অঞ্চলের মানুষ। যে কারণে টানা বৃষ্টিপাতে ভবদহ অঞ্চলসহ নিন্ম অঞ্চলে জমে যায় পানি। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে উপজেলার সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের ২৮ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বসতবাড়ির উঠানে কোমর পর্যন্ত পানি জমে রয়েছে। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন মানুষ। গবাদিপশু ও মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করছেন। উপজেলা কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভিটা, সরখোলা, ডুমুরতলা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহটী, বাড়েধা, দীঘলিয়া, ভাটাডাঙ্গি, বারান্দিসহ ২৮ গ্রামের হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, সম্প্রতি অতি বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে আমার ইউনিয়নের বিল সংলগ্ন গ্রামগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। কয়েকশ মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রায় ১২৫ হেক্টর জমির সবজি ও ফসলী ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, এবারের জলাবদ্ধতায় অভয়নগর উপজেলার সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমার ইউনিয়ন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখানে মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তা।
পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান আত্মগোপনে থাকায় সাবেক চেয়ারম্যানের ছেলে রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমাণ ফসলি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
প্রবির কুমার রায়, আক্তারুজ্জামান, জালাল মোল্যাসহ ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকরা বলেন, অতি বর্ষণ ও উজানের পানির কারণে তাদের হাজার হাজার বিঘা মাছের ঘের ভেসে গেছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অভয়নগরে ৩ ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমির ৩২০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, রোপা-আমনের ৫৯০ হেক্টরসহ ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ভবদহের স্লুইস গেটে ৪টি পানির পাম্প চলমান রয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।