চৌগাছায় চলছে বলুহ মেলার প্রস্তুতি

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহ মেলার দিন ঘনিয়ে আসছে। তাই রওজা শরিফের সংস্কার কাজ দ্রুত গতিতে চলেছে। অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণ চলছে। চলছে না আয়োজন।
চৌগাছার নারায়নপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম হাজরাখানা। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাড়ে উঁচু মাটির ঢিবির ওপর চিরনিদ্রায় শায়িত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.)। প্রতি বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার বলুহর রওজা শরিফকে ঘিরে বসে মেলা। চলে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে। অন্যান্য বছরগুলোর মত এ বছরও মেলাকে ঘিরে এলাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে।
গতকাল রওজা শরিফে গিয়ে দেখা যায়, রওজা শরিফকে দৃষ্টিনন্দন করতে নানা উন্নয়ন কাজ চলছে। এ সময় কথা হয় রওজা শরিফের খাদেম জয়নাল সাহার সাথে। তিনি বলেন, পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর ছিলেন। তার এই রওজাকে ঘিরে ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার ওরশ শুরু হয়। চলে একাধারে তিনদিন। শেষ মঙ্গলবার মধ্যরাতে রওজা গোসল করানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর মিলাদ, জিকির, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও রওজায় আগত খলিফাদের আপ্যায়নসহ নানা আয়োজন চলে। রওজাকে ঘিরে যুগযুগ ধরে এখানে মেলা বসে। যাকে আমরা গ্রামীণ মেলা বলে থাকি। মেলায় আগত ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ আনন্দ উপভোগ করেন। মেলাতে মিষ্টি- মিঠাই, কাঠের তৈরি আসবাবপত্রসহ হরেক রকমের পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে দুই দশক আগেও যেসব স্থানে মেলা বসত সেখানে এখন বসতবাড়ি হয়েছে। যার কারণে মেলার জায়গায় সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদে একটি বাঁশের সাঁকো ছিলো। সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার নদ পারাপারে মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে হবে। এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে হাজরাখানা গ্রামসহ পাশের টেংগুরপুর, পেটভরা, চাঁদপাড়া, তালপট্টি নিয়ামতপুর, বেলেমাঠ, আন্দারকোটা গ্রাম এলাকাতে সাজসাজ রব পড়ে গেছে।
যাকে ঘিরে এতো আয়োজন তার সম্পর্কে অনেক অজানা কথা জানান এলাকার বয়োবৃদ্ধরা। মিজানুর রহমান আল চিশতী তরিকত দর্শন নামে একটি বইতে লিখেছেন। পীর বলুহ দেওয়ান (র.) -র আদি নিবাস ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধুপাদি গ্রামে। হাজরাখানা গ্রাম তার মামার বাড়ি। বলুহ যখন তার মায়ের গর্ভে সাত মাস তখন তার মা পানি আনতে কলস নিয়ে পাশে কপোতাক্ষ নদে যান। এ সময় হঠাৎ মেঘ করে প্রচন্ড ঝড়- বৃষ্টি শুরু হয়। ভয়ে কাতর হন বলুহরের মা। এ সময় গর্ভ থেকে গায়েবি আওয়াজ আসে, মা তুমি ভয় পেয়ো না। তোমার এবং আমার কোনই ক্ষতি হবে না। শুধু তাই না, পীর বলুহরের যখন ১০ বছর বয়স তখন তিনি গরু চরাতে পাশেই ব্যাদন বিলে যান। তিনি গরুগুলো একজনের ক্ষেতে দিয়ে বাবলা গাছের নিচে আরাম করতে থাকেন। জমির মালিক এই দৃশ্য দেখে গরুগুলো খোয়াড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বলুহ দেখার পর গরুগুলোকে বক বানিয়ে বাবলা গাছের মাথায় বসিয়ে রাখেন। এ ধরনের অসংখ্য অলৌকিক কর্মকান্ডের ফলে ধীরে ধীরে পীর উপাধিতে ভূষিত হন বলুহ দেওয়ান (র.)।
হাজারাখানা গ্রামের বাসিন্দা নারায়নপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বিএম বাবুল আক্তার বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই গ্রামের দলমত নির্বিশেষে আমরা সকলে বসে মেলা কীভাবে পরিচালনা করা যায় সে সিদ্ধান্ত নেব। নেওয়া হবে মেলা পরিচালনার জন্যে অনুমতি।