শিশু জন্মের পর অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই যশোরের কোনো হাসপাতালেই

0

 

বিএম আসাদ ॥ জন্মের সময় যথাযথ নিয়মে অক্সিজেন প্রদান বা পারটোগ্রাফ (মাতৃত্ব এবং ভ্রুণ এর যৌগিক গ্রাফিকাল রেকর্ড) পদ্ধতি অবলম্বন না করার কারণে নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই ৭ মাসে শুধুমাত্র যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগই অক্সিজেন সংকটের কারণে মারা গেছে। চিকিৎসকরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট না কওে জন্মত্রুটি হিসেবে উল্লেখ করছেন।
গর্ভবর্তী মা যখন এসব হাসপাতালে সন্তান প্রসব করার জন্য ভর্তি হন, তখন গাইনি বিশেষজ্ঞগণ তাদের সিজার কিংবা নরমাল সন্তান প্রসব করিয়ে থাকেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় অধিকাংশ শিশু সঠিক অক্সিজেন পায় না। সাথে সাথে তাদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করার নিয়ম হচ্ছে পারটোগ্রাফ। আর এটি অবলম্বনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট গাইনি বিশেষজ্ঞদের। এ জন্য অপারেশন থিয়েটারেই কিংবা পাশেই নবজাতকের অক্সিজেন প্রদান করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। কিন্তু যশোরে কোনো হাসপাতালেই সে ব্যবস্থা নেই। গাইনি চিকিৎসকগণ রোগী এলেই সিজার ও বাচ্চা ডেলিভারি করে কাজের ইতি টানেন। আর বাচ্চা অসুস্থ হলেই পাঠিয়ে দেন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিওনেটাল ইউনিটে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিওনেটাল ইউনিট নেই।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) হতে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন নবজাতককে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। এদের ভেতর ৩ জন নবজাতকের জন্ম হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। বাকি ১৮ জন নবজাতকের জন্ম হয় যশোর শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এক নবজাতকের জন্ম হয় বাড়িতে। তাদের সকলকে জন্মগত ত্রুটি পিএনএ এবং বার্থঅ্যাসপেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত বলে হাসপাতালের খাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। এদের ভেতর ১০ জনকে শনিবার ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ১২ জন নবজাতক শিশু ওয়ার্ডের নিওনেটাল ইউনিটে ফটোথেরাপি মেশিনের মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত জানুয়ারি হতে জুলাই পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ১শ ১৭জন শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এদের অধিকাংশই নবজাতক এবং জন্মগত ত্রুটি বা কম অক্সিজেন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তারা পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়ায় এসব নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
যশোর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি রেজিস্ট্রার শিশু বিশেষজ্ঞ মো. আফছার আলী এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো হাসপাতালে ডেলিভারি করার সময় সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকের জরুরি অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এমন কি যশোর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালেও নেই। শিশুরা কম অক্সিজেন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আর অক্সিজেন কম থাকায় অসুস্থ হলে তাদের কম ওজন, বার্থঅ্যাসপেক্সিয়া, পিএনএ এসব রোগে আক্রান্ত বলে সরকারি এ হাসপাতালের শিশু বিভাগে পাঠানো হয়। এটাকে রীতিমতো ত্রুটিপূর্ণ সিজার বা ডেলিভারি বলা যায়। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন আর রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা যশোরের কোনো হাসপাতালেই নেই। তবে সব হাসপাতালে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকের অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহমুদুল হাসানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কোনো বেসরকরকারি হাসপাতালে নিওনেটাল বিভাগ নেই। সে রকম পরিস্থিতি হলে তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্ম ওপর মহলে জানাবেন ।