বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ গণতন্ত্রের পতাকা শোভিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। মহান স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের সর্বাধিনায়ক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি,স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার তৎকালীন রমনা রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে দলটির যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে নানা প্রেক্ষাপটের মধ্যে দিয়ে বিএনপি আজ কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকের আস্থারস্থলে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পনের বছরের শাসনামলে গুম, খুন, জেল জুলুমের মত অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকেরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এই প্রথম বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাহেন্দ্রক্ষণে দেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা বিরাজ করছে। বন্যাদুর্গত মানুষের কথা চিন্তা করে এবার দলটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভার মত কর্মসূচি বাদ দিয়ে ওই অর্থ দলের ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, দোয়া অনুষ্ঠান করবে দলটি। এদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের পাশপাশি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেই ঐতিহাসিক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতার মহানায়ক দলটির আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা দেন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই ৭৬ জন থেকে আজ এই দলের মোহনায় যুক্ত কোটি কোটি নেতাকর্মীর পাশাপাশি রয়েছে কোটি কোটি ভক্তকূল। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ৪৫টি বছরে সংগ্রাম, জনপ্রিয়তা আর চড়াই-উৎরাই আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূল প্রতিপাদ্য করে ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০৭টি আসন লাভ করে। এ দলের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, তার আত্মপরিচয় সে কেবল ‘বাঙালি নয়’, ‘বাংলাদেশি’।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে কেবলমাত্র নতুন একটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেনি, প্রতিষ্ঠিত হয় বহদলীয় গণতন্ত্র। দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদভিত্তিক ইস্পাত কঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখ-তা ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত এবং সুসংহত করা। উন্নয়নের রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন করা। বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ নির্বাচিত একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং সুষম জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি করা। গণতান্ত্রিক জীবন ধারা ও গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসেবে গণনির্বাচিত জাতীয় সংসদের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা। বাস্তবধর্মী কার্যকর উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচারভিত্তিক সুষম অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। যাতে সকল বাংলাদেশি নাগরিক অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা ও মানবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক ও বাহক, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, সৎ ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত ছিলেন। সেটি আজও তার অনুসারীদের ধমনীতে বিরাজমান। রাজনীতিতে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটার পর তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের বাকশাল হটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেন। বাংলার কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সবচেয়ে বেশি বার জনতার রায়ে রাষ্ট্র পরিচালানার মাধ্যমে ফুটিয়েছে অজস্র সোনালি আশার আলো।
দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে ঘাতকের বুলেটে নিহত হন। এরপর তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে নব্বই দশকে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে। ৯১ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তার দল নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশে সর্বপ্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার হিসেবে তুলে ধরেন। জনগণের রায়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হবার গৌরব অর্জন এবং একই সাথে তিনি পাঁচটি আসনে সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০৮ সালের ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিএনপিকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করে। কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ এক যুগের অধিক সময়ের শাসন আমলে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন, সর্বোপরি জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ৬০ লক্ষাধিক নেতাকর্মী একাধিক মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মী গুম এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মী নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের মত গুম হওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় নেতা নিখোঁজ আছেন।
দেশের সকল সংকটে দলটির নেতাকর্মী ত্রাণ কর্মকর্তার ভূমিকায় সর্ব প্রথমে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে ২০২০ সালের করোনা মহামারিতে দলটির নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন ভাবে সেবা দিয়েছেন। ২০২২ সালে সিলেটে শতাব্দির ভয়ানক বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ঠিক একই ভাবে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সমর্থক সর্বোচ্চ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।