চৌগাছার ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে,সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গত ৫ আগস্টের পর হতে এলাকা ছাড়া বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের পর দিন পরিষদে না আসার কারণে সেবা গ্রহীতাদের বেড়েছে দুর্ভোগ। অবশ্য পরিষদের সচিব বলছেন জরুরি কোনো কাগজপত্র হলে চেয়ারম্যানের অনুসারীদের মাধ্যমে তা স্বাক্ষর করিয়ে আনা হচ্ছে, তবে তিনি কোথায় আছেন তা কেউ জানেন না। এ ভাবে চলতে থাকলে সমস্যা চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রায় নেওয়ার খবরে চৌগাছার অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সব জনপ্রতিনিধির মধ্যে কেই স্বল্প সময়ের জন্য পরিষদে আসলেও প্রায় দুই সপ্তাহ পরিষদে আসেননি ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। তার অনুপস্থিতি যেনতেন ভাবে চলছে পরিষদ। ইউনিয়নবাসী জরুরি কাজে পরিষদে এসে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন বাড়িতে। এক দুই দিন না এভাবে চলছে প্রায় দুই সপ্তাহ।
ইউনিয়নের চান্দা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে ফারুক হোসেন বলেন, আমি একটি নাগরিক সনদের জন্য তিন দিন ঘুরছি। সচিব বলছে চেয়ারম্যান সাহেবের স্বাক্ষর নেই তাই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অনুরুপ ভাবে ইউনিয়নের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মিন্টু, মৃত বাহার আলীর ছেলে কামাল হোসেন বলেন, জন্ম সনদের জন্য পরিষদে আসছি আর ফিরে যাচ্ছি। এখানে কর্মরত যারা আছেন তারা সঠিক কোনো জবাব দিতে পারছে না। এ ভাবে চললে মানুষ কোথায় যাবে আর কে তাদের কষ্ট লাঘব করবে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিগত ১৭ বছর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে। তিনি সলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি। অভিযোগ আছে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ওই বিদ্যালয়ে তিনি ৭৫ লাখ টাকা অর্থবানিজ্য করে ৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। ইউনিয়নের কাবিখা, কাবিটা, টিয়ারসহ সব কিছুতেই ছিল তার সরাসরি হাত। ফলে প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সমাজের নি¤œবিত্তদের পরিষদে নানা ধরনের কাজ দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ কোনো কাজই পায়নি ভুক্তভোগীরা। বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে এই চেয়ারম্যান। তিনি অধিক ক্ষমতাধর হওয়ার কারণে বিগত দিনে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সরকার পদত্যাগ করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা টাকার জন্য চাপ দিতে পারেন এই ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা বলেন, তিনি যদি সৎ ও স্বচ্ছ হবেন তাহলে কেন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন।
এ দিকে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে পরিষদের উদ্যোক্তা তরুণ মিত্র বাচ্চু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাচ্চু বলেন, অনলাইন ও কাগজপত্র লেমিনেটিং বাবদ কিছু টাকা মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন সেবা গ্রহীতাদের সংখ্যা কম। যারা সেবা নিতে আসছে আমরা সময় নিয়ে তাদেরকে পরে আসতে বলছি। এরমধ্যে চেয়ারম্যান অনুসারীদের মাধ্যমে কাজগ পত্রে সই স্বাক্ষর করে আনছি।
এ বিষয় জানার জন্য চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।