সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

0

মোংলা ( বাগেরহাট) সংবাদদাতা॥ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ঢাংমারী স্টেশনে লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বনজদ্রব্য আহরণের জন্যে নতুন বিএলসি নবায়ন ও মাছ ধরার পাশ পারমিট বাবদ মোটা অংকের ঘুষ আদায়, নিষিদ্ধ সময় ও অভয়াশ্রমে মাছ ধরার সুযোগ, গোলপাতা মৌসুমে বাওয়ালীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত বনের পুকুর ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামত বাবদ ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্টেশনের এসও ফরেস্টার মোহসীন আলী নেপথ্যে থেকে এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে ঢাংমারী স্টেশনের অবস্থান। এ স্টেশনের অধীনে লাউডোব, ঘাগরামারী, ঝাপসি ও জোংড়া নামক বন বিভাগের ৪টি ক্যাম্প (ফাঁড়ি) রয়েছে। এ ৪টি ক্যাম্পের ইনচার্জ হলেন ঢাংমারী স্টেশনের এসও। সুন্দরবনের এ স্টেশনটি বনরক্ষীদের কাছে বেশ লোভনীয়। এখানে পোস্টিং পাওয়া অনেকটা সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে অনেকে মনে করেন।
জেলে- বাওয়ালীদের অভিযোগ, প্রায় বছর খানেক আগে এ স্টেশনে এসও হিসেবে ফরেস্টার মোহসীন আলী যোগদান করার পরই জেলে- বাওয়ালীদের ওপর ব্যাপক জুলুম নেমে আসে। চলে উৎকোচ বাণিজ্য। তার যোগদানের পর পরই সুন্দরবনে মাছ ধরার পাশাপাশি বনজ দ্রব্য আহরণের মৌসুম শুরু হয়। মৌসুমের শুরুতে তিনি জেলেদের পাশ পারমিট (মাছ ধরার অনুমতি) প্রদানের নামে সরকার নির্ধারিত ফির পাশাপাশি অতিরিক্ত কয়েকগুণ ঘুষ আদায় করতে শুরু করেন। এরপর গোলপাতা মৌসুম শুরু হলে তিনি বাওয়ালীদের কাছ থেকে বেপরোয়াভাবে অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করেন। এ সময় তাকে একটি গোলপাতা কূপের দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি সেখান থেকেও বাওয়ালীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন।
সূত্র জানায়, গত জুন মাস থেকে ৩ মাসের জন্যে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরাসহ সব ধরনের বনজদ্রব্য আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় জুলাই মাস থেকে জেলে -বাওয়ালীদের বনজদ্রব্য আহরণের জন্যে নতুন বিএলসি (নৌযানের লাইসেন্স সনদ) ও নবায়ন শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ স্টেশনে ৪৩০টি বিএলসি নবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে ৬৮টি বিএলসি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিএলসি নবায়নের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ স্টেশনে চলছে লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্য। সরকারি নিয়মানুযায়ী প্রতি ১ কুইন্টাল ধারণ ক্ষমতা নৌকার অনুকুলে প্রতি বিএলসি নবায়নে ১০ টাকার সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়ার কথা। অথচ এ স্টেশনে বিএলসি নবায়নে নেওয়া হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা করে। মাছ ধরার জেলেরা সাধারণত ২০ কুইন্টাল ধারণ ক্ষমতার মধ্যেই বিএলসি নবায়ন করে থাকেন। সেখানে জেলেদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর নতুন বিএলসির ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে। বর্তমানে বিলম্ব ফি দিয়ে বিএলসি নবায়ন চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে জানান, অতিরিক্ত টাকা না দিলে বিএলসি নবায়ন বা নতুন বিএলসি দেওয়া হয় না। উল্টো বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ভয়ভীতি দিয়ে এসব ঘুষের টাকা আদায় করা হয়।এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মোহসীন আলী তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্যি না দাবি করে বলেন, বিএলসি নবায়ন, পাশ পারমিট প্রদান ও গোলপাতা আহরণে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। যা নিয়মে আছে তাই নেওয়া হয়। এক শ্রেণির জেলে -বাওয়ালী আছে তারা অবৈধ সুযোগ নিতে চান। সুযোগ না দিলে তারা এসব বদনাম করতে থাকেন। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত নন।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম ও চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবের বক্তব্য জানার জন্যে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।