যশোরে সহকর্মী হত্যার বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভ প্রদর্শন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি সকল পুলিশ সদস্যের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ১১ দফা দাবিতে বুধবার পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে। ‘হৈ হৈ রৈ রৈ বিসিএস গেলো কৈ/ আমার ভাই মরলো কেনো/ বিচার চাই বিচার চাই’ এমন স্লোগান দিয়ে পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অতিরিক্ত দুই জন পুলিশ সুপার তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। অবশ্য পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মাসুদ আলম সেখানে গিয়ে তাদের দাবি যৌক্তিক বলে আশ্বস্ত করলে তারা নিবৃত্ত হন।
১১ দফা দাবিতে বুধবার বিকেলে পুলিশ লাইন্সের সামনে পুলিশের অধস্তন নারী ও পুরুষ সদস্যরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এ সময় তাদের কাছে হাতে লেখা পোস্টার বহন করতে দেখা যায়। তারা সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। হ্যান্ডমাইক হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। খবর পেয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান সেখানে যান। পুলিশ লাইন্সের ভেতরে ঢুকে তাদের সামনেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তাদেরকে বার বার শান্ত হতে বলা হয়। কিছুটা শান্ত হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বিশ্বাস করে পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। আমরা আজ সেই বিশ্বাসের পুলিশ হতে চাই। আমরা পুলিশের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচারও চাই।’ এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ফের দাবি দাওয়ার বিষয়ে হট্টগোল শুরু করেন।
এরই মধ্যে পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পুলিশ লাইন্সে চলে আসেন। তাকে দেখে ফের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ সুপার মাসুদ আলম কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিক্ষোভ প্রদর্শন দেখতে থাকেন। পরে তিনি তাদেরকে ভেতরে মিলনায়তনে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে তাদের কথা শোনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তারা তার কথায় সাড়া দিয়ে তাকেই সামনে রেখে বিক্ষোভ করতে করতে মিলনায়তনে যান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি প্রথমে সাংবাদিকদের ব্রিফ দেন। পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। পৃথিবীর কোথাও এভাবে পুলিশকে হত্যা করা হয়নি। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের হত্যার বিচার চান তারা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান জড়িতদের। নিহতদের পরিবারের সদস্যা আজ তাকিয়ে আছেন হত্যার বিচারের দাবিতে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ ছাড়াও যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তারও বিচার চান তারা। প্রতিটি হত্যার বিচার চান। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ করবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি ন্যায় বিচারই করবেন।
এদিকে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী পুলিশ সদস্যরা জানান, উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের যে আদেশ দেন তা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের প্রাণ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে আজ। অথচ উর্ধ্বতন সেই কর্মকর্তাদের গায়ে আঁচড়ও লাগে না। অধস্তনদের কথা শুনতে চান না উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন নায্য সুবিধা থেকে। এ কারণে তারা ১১ দফা দাবিতে আজ বাধ্য হয়ে মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে অন্যতম দাবি সকল পুলিশ সদস্যের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।