ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল দেশ এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গণবিক্ষোভে উত্তাল প্রায় সারা দেশ। গতকাল রাজধানীসহ জেলা শহরগুলোতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে কুমিল্লা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বাধা ও গুলির কারণে সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মানুষের ঢলে জনসমুদ্রে পরিণত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। কোথাও এতটুকু জায়গা ফাঁকা ছিল না। শহীদ মিনার পেরিয়ে পাশের সড়কগুলোতেও অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ছিল সেই জনসমুদ্র।
উত্তাল এই সমাবেশ থেকে বিকেলে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীসভার সব সদস্যের পদত্যাগ দাবিতে আজ রোববার সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ শুরু হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন নাহিদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে।
এক দফা ঘোষণাপত্রে বলা হয়, যেহেতু বর্তমান সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। নারী-শিশু-ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক কেউ এই গণহত্যা থেকে রেহাই পাননি। যেহেতু সরকার এই হত্যাযজ্ঞের বিচার করার পরিবর্তে নির্বিচারে ছাত্র-জনতাকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে। যেহেতু সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মরণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটন করেছে। যেহেতু ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-মজুরসহ আপামর জনগণ মনে করছে, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ বিচার এবং তদন্ত সম্ভব নয়। সেহেতু, আমরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করছি।
‘একই সাথে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে ওই গণজোয়ার থেকে স্লোগান ওঠে- ‘আওয়ামী লীগের কবর দে, সারা বাংলায় খবর দে’, ‘আবু শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আওয়ামী লীগের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘২৪ এর রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘কে কে রাজাকার হাসিনা হাসিনা’ ইত্যাদি।
বিকেল ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ দিতে দেখা যায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘৭১ এর রনাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা’র ব্যানারে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে সমবেত হন।
এছাড়া রাজধানীর আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর-১০ ও সায়েন্সল্যাব, শহীদ মিনারে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কুমিল্লায় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক দেখলেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মারধর এবং বিক্ষোভ মিছিল লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত ৮ জন গুলিবিদ্ধ ও প্রায় ২৫ জন এর বেশি শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সকাল ১১টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল নিয়ে বের করে কান্দিরপার মোড়ে আসার চেষ্টা করলে এ মারধর শুরু করেন তারা।
গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ২টি পুলিশ বক্স ও ৩টি পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকাল বেলা ১১টা থেকে মাওনা চৌরাস্তার আশপাশে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সাড়া দিয়েছে সিলেটের মানুষও। সমাবেশে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দসহ ডাক্তার, আইনজীবী, শ্রমজীবীদের পাশাপাশি অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে সিলেটের টিলাগড়, পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে এবং নয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে বরিশালের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বেলা ১১টায় বরিশালে এ কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। নথুল্লাবাদ থেকে মিছিল নিয়ে আমতলা মোড় যাওয়ার সময় চৌমাথা পুলিশ বক্সে হামলা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার সময় পুলিশ থাকলেও তারা কোনো বাধা দেয়নি বলে তিনি জানান।
এছাড়া রংপুরেও শত শত মানুষ বিক্ষোভ-মিছিল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বিকেল ৩টা থেকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের মোড়েও বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে। কুমিল্লাতে বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর বাইরে রাজশাহীর স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু জানান যে শনিবার সকালে রাজশাহীর হাজারখানেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়েছে এবং কিছু সংঘর্ষের ঘটনাও সেখানে ঘটেছে।