জেলার দুর্নীতিবাজরা নির্বিঘ্নে

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজধানীর দুর্নীতিবাজদের বিস্তর খবর গণমাধ্যমে আসার পর জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি দফতরের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় জোর পেয়েছে। এবং ওই সমস্ত দফতরের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখনও পর্যন্ত নির্বিঘœ দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করছেন সাধারণ মানুষ।
বলা হচ্ছে- জেলা পর্যায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে অধরায় থেকে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা। এজন্য শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে এ শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার জরুরি বলে মত দিয়েছেন যশোরের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও, সামাজিক ও রাজনৈতিক বলয়ের সাথে যুক্ত থাকা অনেক ব্যক্তির নামে প্রায়শই অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসলেও এসব দুর্নীতিতে যুক্তদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত খুব কম রয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে যশোরসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে শাসকদলের অসংখ্য নেতা ও কর্মী অবৈধ অর্থের মাধ্যমে শ শ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ দেশের বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থার ত্রুটি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার কারণে এসব রাঘববোয়াল ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি দেশের কয়েকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজের বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা সরব হওয়ায় তৃণমূলের এসব দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করার দাবি জোরালো হচ্ছে।
যশোরে চাকরি করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে বসবাস করছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এর মধ্যে পুলিশ, রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) যশোরের সভাপতি অধ্যক্ষ শাহীন ইকবাল বলেন, দুর্নীতিবাজরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মাঠ পর্যায়ে থেকে এসব দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে তাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে দুর্র্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দেশের কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির নামে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এটি শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক না রেখে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজে এর বড় প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক যশোরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত দেশে যারা দুর্নীতি করেন তারা শিক্ষিত ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি। এসব ক্ষমতাবানের বড় একটি অংশ দেশের তৃণমূল পর্যায়ে। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এজন্য দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ চায় এসব দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে জেলা পর্যায়ের দুর্নীতি দমন কমিশনের এসব অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে দুদক আইনের কিছুটা জটিলতা থাকায় সম্ভব হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারন দুর্নীতি দমন কমিশনের সবকিছুই কেন্দ্রীভূত, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা ছাড়া জেলা শাখা কিছুই করতে পারে না।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাথে যুক্ত থাকলেও আমরা কোনো দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত বা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমাদের কাজ হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা। তাছাড়া জেলা পর্যায়ে যে কার্যালয় আছে তারাও দুদকের চেয়ারম্যান ও দুইজন কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুদক সদর কার্যালয় থেকে যশোর-নড়াইল এলাকার অনেক ফাইলের অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়ে দুদক যশোর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী খুব দ্রুত সময়ে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে এ শুদ্ধি অভিযান জোরালো করা হবে।
তবে যশোরে দুদকের সমন্বিত কার্যালয় থেকে জানা যায়নি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেমন অভিযোগ আছে এ দফতরে।