যশোরে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যর্থ হতে চলেছে

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে বিক্রয় মূল্য বেশি হওয়ায় যশোরে সরকারি গুদামে ধান সংগ্রহ আশানুরুপ হয়নি। ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালেও গত দুই মাসে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক তৃতীয়াংশ। এই সময়ে ৩৪ দশমিক ৭৪ ভাগ ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ বেশি জমিতে গম উৎপাদন হলেও সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
এবারের বোরো মৌসুমে যশোর জেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন। সংগ্রহের দুই মাস তিন দিন পরে সেখানে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৭ মেট্রিক টন। ৩০ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার সিদ্ধ চালের বিপরীতে, সংগৃহীত হয়েছে ১৮ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৯৫ মেট্রিক টন। তবে আতপ চাল ও গম সংগ্রহের পরিমাণ পুরোপুরি শূন্যের কোটায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। এছাড়া এ বছর ৬২৫ হেক্টরের বিপরীতে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়। সেখান থেকে প্রায় প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াইগুণ বেশি জমিতে গম উৎপাদন হয়।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মে মাসের ৭ তারিখ থেকে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ শুরু হয়। শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট। এবার প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা, সিদ্ধ চালের মূল্য ৪৫ টাকা, আতপ চালের মূল্য ৪৪ টাকা এবং গমের মূল্য ৩৪ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কৃষকদের একটি করে কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় এবং তার চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ১০ জুলাই পর্যন্ত জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২৬০ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ দশমিক ৭। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭০৮ দশমিক ৯ মেট্রিক টন, সেখান থেকে সংগৃহীত হয়েছে ৫ হাজার ৯৪৩ মেট্রিক টন।
মনিরামপুরে ২ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৯৫ মেট্রিক সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৫৩। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২১৭ মেট্রিক টন, সংগৃহীত হয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ দশমিক ১ মেট্রিক টন।
কেশবপুরে ১ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০১৩ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ দশমিক ৩৩। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, সংগৃহীত হয়েছে ৬৯২ দশমিক ৩ মেট্রিক টন।
অভয়নগরের ১ হাজার ৩৯১ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৩০ দশমিক ৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩০ দশমিক ৯৬। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৬২ দশমিক ৩ মেট্রিক টন, ৩ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৬ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে।
ঝিকরগাছায় ১ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৫১ দশমিক ৬ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৩ দশমিক ৬৩। ১ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টনের বিপরীতে ১ হাজার ২৫ দশমিক ৬ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে।
শার্শায় ২ হাজার ৩২৮ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩০৩ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ২৩। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন, সেখানে ৪ হাজার ৩৯৮ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে।
বাঘারপাড়ায় ১ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯৩৪ দশমিক ৭ মেট্রিক টন, লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ দশমিক ৮১। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন, সেখানে সংগৃহীত হয়েছে ১৬৯ দশমিক ২।
চৌগাছায় ১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫৬৬ দশমিক ৭ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩১ দশমিক ৬৩। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ২৩৯ মেট্রিক টনের বিপরীতে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৩ মেট্রিক টন সংগৃহীত হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর ইউনিয়নের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, ধান ঘরে তুলে উৎপাদন ব্যয় মেটাতে গিয়ে উঠান থেকে বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করা বেশ ঝামেলার। তাছাড়া মোটা ধানের চেয়ে চিকন ধানের বাজারদর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। সরকারি গুদামে ধান পৌঁছে দিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে, পরিশ্রমও বেশি হয় । বাড়ির উঠান থেকে ধান বিক্রির করতে পারি। এ জন্য সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
যশোরের আটটি উপজেলার ধান ও চাল সংগ্রহের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, এ বছর সরকার থেকে বেঁধে দেওয়া যশোরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কুরবানির ঈদসহ গত ১৫ দিনে ধান সংগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়ে। তাছাড়া বস্তা সংকট ছিল। তবে আশাবাদী চালের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করতে সক্ষম হবো।