যশোরে মহাসড়কের শৃঙ্খলা বজায়ে ভূমিকা নেই হাইওয়ে পুলিশের

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা না থাকায় যশোরের মহাসড়কগুলোয় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কে ঝরেছে তাজা প্রাণ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যশোর সার্কেল অফিসের হিসাবমতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৮৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন,আহত হয়েছেন ৮৪ জন। অভিযোগ রয়েছে, জেলার মহাসড়কে ভারি ও হালকা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের কোনো কার্যক্রম নেই।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জেলা যশোর। পরিবহন শ্রমিকদের হিসাবমতে জেলার মহাসড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন ১৮টি রুটে দেড় হাজারের মতো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। সেই সাথে বেনাপোল স্থলবন্দর, নওয়াপাড়া নৌ বন্দর, খুলনা শিল্পাঞ্চলের পণ্যবাহী যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে।
অথচ দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, ট্রাফিক জট নিয়ন্ত্রণ, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিয়মিত টহলের মাধ্যমে নিরাপদ হাইওয়ে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন অপসারণ, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের তাৎক্ষণিক সংস্কার (ব্যাকলাইট, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর ও পার্কিং লাইট) এবং মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের রুটিন কাজ। এ ছাড়া ডাকাতি প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও অবৈধ পণ্যের চোরাচালান বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা, রাস্তার দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলো (ব্লাকস্পট) চিহ্নিতকরণ ও অবৈধ হাটবাজারের তালিকা করে নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব।
বাস্তবে যশোরের কোনো মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। যেখানে জেলার প্রতিটি মহাসড়কে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত হরহামেশায় চলছে তিন চাকার নিষিদ্ধ সকল প্রকার যানবাহন। বিশেষ করে ইজিবাইক থেকে শুরু করে, নসিমন, করিমন, আলম সাধুু, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন। এ ছাড়া যশোর-ঝিনাইদহ এবং যশোর-খুলনা রুটে চলাচলকারী গড়াই এবং রুপসা নামের দুটি পরিবহনের বাসগুলোর চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক। দুটি মহাসড়কে এই পরিবহনের বাসগুলো শৃঙ্খলা নষ্টের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। পরিবহন দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে পাল্লা দিয়ে যাত্রী ওঠানোর প্রবণতা রয়েছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে তারাই মূলত দায়ী। তাছাড়া যশোরের প্রতিটি মহাসড়ের পাশে বাজার রয়েছে। বাজারের অংশে মহাসড়কের দুই পাশের জায়গা দখল করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম হয়। সেগুলো অপসারণেও কোনো ভূমিকা নেই।
অথচ দেশের অন্যান্য জেলার মতো এই জেলার মহাসড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশ যশোর সার্কেলের অধীনে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প সব মিলিয়ে ১০টি রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ যশোর সার্কেল অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত এবং যশোর- মাগুরা মহাসড়কের যশোর অংশ পর্যন্ত ঝিনাইদহের বারবাজার হাইওয়ে থানা, চাঁচড়া মোড় থেকে যশোর- বেনাপোল পর্যন্ত নাভারণ হাইওয়ে ফাঁড়ি , যশোর-খুলনা মহাসড়কে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানা, যশোর-সাতক্ষীরা-চুকনগর সড়কে খর্নিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাাঁড়ি এবং যশোর-নড়াইল সড়কে শৃঙ্খলা তৈরির দায়িত্বে রয়েছে তুলারামপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প।
কিন্তু কার্যত এই সব স্থানে হাইওয়ে থানা, ফাাঁড়ি, কিংবা ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি অথবা তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করি। গত ছয় মাসে ৯৭টি অভিযান পরিচালনা করেছি। এরমধ্যে ১৭৭টি মামলা দায়ের এবং ২ লাখ ১৯ হাজার ১৫০ টাকার জরিমানা আদায় করেছি।
যশোর পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু বলেন, মহাসড়কে শৃঙ্খলা তৈরির দায়িত্ব যাদের তারা সঠিক এবং সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করলে মহাসড়কে শৃঙ্খলা তৈরি সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে যশোরে হাইওয়ে পুলিশ খুলনা রিজিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (যশোর সার্কেল) নাসিম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি খুলনা প্রশিক্ষণে আছি এখন কথা বলতে পারবো না।’